ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত অনেক দেশ: পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী

যুক্তরাষ্ট্রের ইরানে ক্লাস্টার বোমা হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত। রাশিয়ার প্রভাবশালী নেতা মেদভেদেভ জানালেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র সহায়তা দিতে একাধিক দেশ প্রস্তুত। এ অবস্থাকে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বাভাস’ বলেও আখ্যা দিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বোমা হামলার পর ইরানের পরমাণু ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এরই মধ্যে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি দাবি করেছেন, একাধিক দেশ এখন ইরানকে সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহে প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ও রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া:
শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। অপারেশনটির নাম দেওয়া হয় ‘মিডনাইট হ্যামার’। হামলার লক্ষ্যে ছিল ফর্দো, নাতানজ এবং ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনা।
এই হামলার কড়া সমালোচনা করে দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এই বোমা হামলার মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।”
পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা:
রোববার নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) ও টেলিগ্রাম পোস্টে মেদভেদেভ বলেন, “বেশ কয়েকটি দেশ ইরানকে সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র দিতে সম্মত হয়েছে। তারা মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব দিতে এ ধরনের পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।”
তবে কোন কোন দেশ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে—তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেননি মেদভেদেভ। তিনি শুধু ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য এবার আমূল বদলে যেতে চলেছে।
হামলার ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন:
মেদভেদেভ যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের ফলাফল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “তিনটি স্থাপনায় হামলা করেও আমেরিকানরা তেমন কোনো কৌশলগত সফলতা অর্জন করতে পারেনি। ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোর বড় অংশ অক্ষত রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের ‘সাফল্য’ দিয়ে কেউ যদি নোবেল শান্তি পুরস্কার আশা করে, সেটা একেবারেই হাস্যকর।”
ইরানি জনমতের পরিবর্তন:
মেদভেদেভের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার পর ইরানে জনমত আরও দৃঢ়ভাবে সরকারের দিকে ঝুঁকেছে। আগের তুলনায় এখন দেশের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি জনগণের সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, “এই হামলা সরকারের বিরোধীদেরও ঐক্যবদ্ধ করেছে। আগের নিরপেক্ষ বা সমালোচনামূলক মানুষও এখন সরকারপন্থী হয়ে উঠছে।”
সম্ভাব্য আঞ্চলিক যুদ্ধ:
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পারমাণবিক অস্ত্র সংক্রান্ত এই বিতর্ক ও প্রস্তুতি পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে। মেদভেদেভ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছেন, “আপনারা একটি নতুন যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।”
এই বক্তব্যের পরেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যে স্থল যুদ্ধের সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।
রাশিয়া-ইরান কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার:
ইরান এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করছে। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (OIC) সম্মেলন শেষে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, “আমরা রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংলাপে যাচ্ছি। আগামীকাল পুতিনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।”
“ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত অনেক দেশ” — দিমিত্রি মেদভেদেভ, নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান
উপসংহার:
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংঘাত এখন একটি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর এ ধরনের মন্তব্য শুধু উত্তেজনাই নয়, ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই উত্তেজনা কমাতে না পারলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি ভয়াবহ মোড় নিতে পারে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্ব নেতারা কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন।
এম আর এম – ০০০৮ , Signalbd.com