বিশ্ব

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন হামলা: ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র উত্তেজনা

যুক্তরাষ্ট্রের ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামক সামরিক অভিযানে ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে বিস্ফোরক হামলা চালানো হয়। এই অভূতপূর্ব হামলায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অভিযান ও ঘোষণার বিস্তারিত

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে একটি সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত হামলা চালিয়েছে, যার কোডনেম ছিল ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’। পেন্টাগনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন জানান, এই অভিযান ছিল দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টাব্যাপী এবং একাধিক ধাপে পরিচালিত।

এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান, উচ্চগতির যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপিত টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা ব্যবহৃত হয়। ইরানের ইসফাহান, নাতাঞ্জ ও ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাগুলো এই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল।

অভিযানের কৌশল ও বাস্তবায়ন

স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়ে শনিবার সকাল পর্যন্ত চলে এই অভিযান। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় ঘাঁটি থেকে বি-২ স্টিলথ বিমানের বহর আকাশে উড্ডয়ন করে। হামলার প্রথম ধাপে সাবমেরিন থেকে ২০টিরও বেশি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ইসফাহানের ভূপৃষ্ঠে আঘাত হানে।

পরবর্তী ধাপে, বি-২ বিমানের মূল বহর বিভ্রান্তিমূলক পথে বিভক্ত হয়ে পশ্চিম ও পূর্বমুখী হয়। একদল বিমানের দায়িত্ব ছিল ইরানকে বিভ্রান্ত করা, অন্যদল গোপনে প্রবেশ করে মূল আক্রমণ পরিচালনা করে। ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় ফেলা হয় দুইটি জেবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বোমা, যা বাঙ্কার-বাস্টার নামেই পরিচিত।

জেনারেল কেইনের ভাষায়, “অভিযানে নির্ধারিত সকল লক্ষ্যবস্তু সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে এবং কোনো মার্কিন বিমান প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়নি।”

ঘটনার পটভূমি

গত দুই সপ্তাহ ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ব্যাপক সামরিক উত্তেজনা চলছিল। ইসরায়েলি বাহিনীর এক হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল নিহত হন, এবং তাতে কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও প্রাণ হারান। এরপর ইরান পাল্টা প্রতিশোধের হুমকি দেয়। এমন এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এই জটিল অভিযান চালাল।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করা, সরকার পরিবর্তন নয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই অভিযান জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির হুমকি প্রতিহত করতেই এ পদক্ষেপ।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার হেগসেথ বলেন, “এই অভিযান ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো পুরোপুরি অকার্যকর করেছে। তবে এতে কোনো বেসামরিক প্রাণহানি ঘটেনি।”

তিনি আরও বলেন, “এই ধরণের সুসমন্বিত ও প্রযুক্তিনির্ভর হামলা চালানোর সক্ষমতা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে।”

 ইরানের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

হামলার পরপরই ইরান সরকার একটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, তারা আগেই গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক উপাদান অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছিল। তবে এ দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

তেহরান থেকে পাওয়া সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, দেশটির সামরিক বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় ধরনের সামরিক সংঘাত শুরু হতে পারে।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ ও সামরিক বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ ছিল একটি নিখুঁত পরিকল্পনা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ। মার্কিন বিমানবাহিনী যে গোপনীয়তা রক্ষা করে এই হামলা চালাতে পেরেছে, তা ভবিষ্যতে সামরিক ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন সামরিক উপদেষ্টা কর্নেল ব্রুকস ম্যাকলিন বলেন, “এই অপারেশন দেখিয়ে দিল, যুক্তরাষ্ট্র এখনো পৃথিবীর একমাত্র সামরিক পরাশক্তি হিসেবে কার্যকর ও নিখুঁত হামলা পরিচালনায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী।”

সার-সংক্ষেপ

‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ শুধু ইরান নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্ব রাজনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলছে এটি একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছিল, তবে এর পরিণতি কী হতে পারে তা এখনও অনিশ্চিত। পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে এই উত্তেজনার শেষ কোথায় গিয়ে ঠেকে।

এম আর এম – ০০০৭ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button