বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানের বৈশিষ্ট্য: ২৪ হাজার কোটি টাকার বিমান!

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানকে বলা হচ্ছে আধুনিক যুদ্ধ প্রযুক্তির এক অনন্য উদাহরণ। অত্যাধুনিক স্টিলথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এই বিমান শত্রুর রাডার সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে সক্ষম এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বোমারু বিমান হিসেবেও পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর এই বিমানটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

বিমানের ডিজাইন: প্রকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত নকশা

বি-২ বোমারু বিমানের নকশা একেবারে ভিন্নধর্মী। এটি “উড়ন্ত ডানা” ডিজাইনের আদলে তৈরি, যা বাজপাখির ডানার মতো বিস্তৃত। এর বাইরের কাঠামো বিশেষ প্রলেপে ঢাকা থাকে, যা রাডারের তরঙ্গ শোষণ করে ফেলে বা ভিন্ন দিকে প্রতিফলিত করে। ফলে শত্রুর রাডারে এর উপস্থিতি প্রায় অদৃশ্য থাকে। বিশাল আকারের এই বিমানটি শত্রুপক্ষের রাডারে ছোট পাখির সমান সংকেত দেয়।

প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য: গতি ও শক্তির সম্মিলন

বি-২ বোমারু বিমানের দৈর্ঘ্য ৬৯ ফুট (প্রায় ২১ মিটার), উচ্চতা ১৭ ফুট (প্রায় ৫ মিটার) এবং ডানার বিস্তার ১৭২ ফুট (প্রায় ৫২ মিটার)। এর ওজন প্রায় ৭২ হাজার কেজি হলেও এটি সর্বাধিক প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার কেজি ওজন বহন করতে পারে। বিমানটি ঘণ্টায় সর্বাধিক ১,০১০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে সক্ষম এবং একটানা প্রায় ১১,১০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে জ্বালানি পুনঃভরাট ছাড়াই।

বি-২ বোমারু বিমান চালাতে থাকে দুইজন ক্রু—একজন পাইলট এবং একজন মিশন কমান্ডার। এটি চারটি টার্বোফ্যান ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয়, যা আফটারবার্নার ছাড়া কার্যক্ষম থাকে। ফলে ইনফ্রারেড সিগনেচার কম থাকে, যা শত্রুদের নজর এড়াতে সাহায্য করে।

আক্রমণক্ষমতা: বাঙ্কার ধ্বংসে অতুলনীয়

এই বিমানটি সর্বাধিক ১৬টি পারমাণবিক বোমা বহন করতে পারে। বিশেষভাবে তৈরি বাঙ্কার বাস্টার বোমা জিবিইউ-৫৭ এর ওজন প্রায় ১৩,৬০০ কেজি, যা মাটির ৬১ মিটার গভীরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতেও নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে। জিপিএস প্রযুক্তির সাহায্যে এই বিমান একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে একসঙ্গে আঘাত হানতে সক্ষম।

উৎপাদন সংখ্যা ও খরচ

বি-২ বোমারু বিমানের একেকটির দাম প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মূলত শীতল যুদ্ধের সময় ১৩২টি বিমানের পরিকল্পনা থাকলেও পরে সেটি সীমিত করে ২১টিতে নামিয়ে আনা হয়। ২০০৮ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নষ্ট হয়, আরেকটি ২০২২ সালে অবসরে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ১৯টি বি-২ বোমারু বিমান সক্রিয় রয়েছে।

যুদ্ধের ময়দানে বি-২ এর ভূমিকা

১৯৮৯ সালে প্রথমবার আকাশে ওড়ার পর ১৯৯৩ সালে বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়। এই বিমান মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদ করে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপের জন্য তৈরি হয়েছিল। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর হামলার সময়ও এই বিমান ৩৭ ঘণ্টা একটানা উড়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। এ সময় ছোড়া হয় ছয়টি বাঙ্কার বাস্টার বোমা।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বি-২ বোমারু বিমান শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নিদর্শন নয়, এটি আধুনিক যুদ্ধের কৌশলেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। রাডার এড়িয়ে শত্রুর অভ্যন্তরীণ এলাকায় ঢুকে নিখুঁতভাবে আঘাত হানার যে ক্ষমতা, তা অন্য কোনো বোমারু বিমানে নেই।

ভবিষ্যতের যুদ্ধ কৌশলে বি-২ এর গুরুত্ব

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বি-২ বোমারু বিমান যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ভবিষ্যতের যেকোনো কৌশলগত আক্রমণে ব্যবহৃত হতে পারে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে এই বিমান নতুন করে আপডেট করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এমন বিমান ব্যবহারের ফলে বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

এম আর এম – ০০০৬ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button