বাংলাদেশ

নির্বাচনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সমন্বয়, মাঠে থাকবে ৬০ হাজার সেনা সদস্য

Advertisement

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মাঠে প্রায় ৬০ হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও, সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচন সম্পর্কিত দায়িত্ব পালনে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন সরকার

আজ সোমবার (২৮ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে অনুষ্ঠিত এক পর্যালোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বসে নির্বাচনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। সভার পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, “বৈঠকে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ৬০ হাজারের মতো ট্রুপস নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন থাকবে এবং তারা মাঠে কঠোর ভূমিকা পালন করবে। ৫ আগস্ট থেকে তারা ডিউটিতে অবস্থান শুরু করবে।”

সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেটিক ক্ষমতা নির্বাচন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে ম্যাজিস্ট্রেটিক ক্ষমতা থাকবে, যার মাধ্যমে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে। এই বিশেষ ক্ষমতা নির্বাচনকালীন সময়ে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অশান্তি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শফিকুল আলম আরও জানান, সেনারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে এবং নির্বাচনী এলাকা থেকে যে কোনো ধরনের সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করবে।

প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সতর্কতা বাড়ানোর জন্য

উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দেশের যেসব এলাকায় নির্বাচনের সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে সেগুলো চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। “ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন জায়গাগুলোতে কড়া নজরদারি ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হবে,” তিনি বলেন। এর মাধ্যমে নির্বাচনের সময় যেকোনো ধরনের সংঘাত ও অবাঞ্ছিত ঘটনা রোধ করা যাবে।

দেড় লাখ পুলিশ সদস্য পাবেন নির্বাচনী প্রশিক্ষণ

নির্বাচনকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুষ্ঠু করতে পুলিশ বাহিনীরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে ভোট পরিচালনা, জনসাধারণের নিরাপত্তা ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর ফলে পুলিশ সদস্যরা ভোটের সময় দ্রুত ও সুচারুরূপে কাজ করতে পারবেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা

সভায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রস্তুতির তথ্য সংগ্রহ করেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, তারা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজাচ্ছে, যাতে দেশের সর্বত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে।

নিরাপদ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তি ও তথ্য বিশ্লেষণেও

সরকার ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ও তথ্য বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা ক্যামেরা, ড্রোন ও রিয়েল টাইম মনিটরিং ব্যবস্থা চালু থাকবে। এতে দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা শনাক্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।

ভোটারদের নিশ্চিন্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সেনা-পুলিশের ভূমিকা অপরিহার্য

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ ভূমিকা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনিবার্য। সেনাবাহিনী ও পুলিশের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি পেলে ভোটাররা নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

পূর্বের নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তার ফলাফল

আগামী নির্বাচনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গত নির্বাচনের তুলনায় আরও শক্তিশালী ও সমন্বিত হচ্ছে। অতীতে, দেশের বিভিন্ন নির্বাচনে নিরাপত্তা বাহিনী যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও কিছু জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার অধিক পরিকল্পিত ও প্রযুক্তি নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও সমন্বয়

নির্বাচন কমিশনও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় সভা চলছে যাতে ভোটগ্রহণের প্রতিটি ধাপে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বাধাহীন কাজ করা যায়। নির্বাচন কমিশন আশা করছে সেনা ও পুলিশের এই প্রস্তুতি তাদের কাজকে আরও শক্তিশালী করবে।

সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব

নির্বাচন শুধু একটি প্রশাসনিক অনুষ্ঠান নয়, এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তাই নিরাপত্তার পূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমন্বয় ও কঠোর প্রস্তুতি ভোটারদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাড়াবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button