ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় ১২টি ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান ও নৌবাহিনীর সাবমেরিন একযোগে হামলা চালিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে। গত শনিবার রাতে ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন সামরিক বাহিনী ১২টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ও ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৃশংস বোমা হামলা
সংযুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামলায় ছয়টি বি-২ স্টেলথ বোমাবাজ বিমান ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিশেষভাবে তৈরি ভারী ও গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা বহন করে। এই বোমাগুলো ফোরদোর ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবল বিস্ফোরণ সৃষ্টি করেছে।
তাছাড়া, মার্কিন নৌবাহিনীর একটি সাবমেরিন থেকে ইরানের নাতাঞ্জ এবং ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় ‘টিএলএএম’ নামক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। নাতাঞ্জে বি-২ বোমাবাজ বিমান দুটি বাংকার বাস্টার বোমাও ফেলেছে।
ইরান: হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ একজন কর্মকর্তার ভাষ্য উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, হামলার ঘটনাস্থলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছিল না, তাই তেজস্ক্রিয়তার কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তেহরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা ‘অ্যাটমিক এনার্জি অর্গানাইজেশন অব ইরান’ (এইওআই) এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইন ও পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) লঙ্ঘন’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হামলা নিশ্চিতকরণ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় এই আক্রমণ ‘আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য’ ছিল।
ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা: ভূগর্ভস্থ নিরাপত্তার আধার
ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি ইরানের অন্যতম প্রধান পারমাণবিক কেন্দ্র, যা সম্পূর্ণ ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় গড়ে তোলা হয়েছে এবং অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সজ্জিত। এই স্থাপনাটি বিশেষভাবে পারমাণবিক ইন্ধন প্রস্তুত এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটিকে হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছিল।
‘বাংকার বাস্টার’ বোমার ভয়ঙ্কর ক্ষমতা
বি-২ স্টেলথ বোমাবাজ বিমান ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা বহন করতে পারে, যা বিশেষত গভীর ভূগর্ভস্থ কেল্লা এবং বাংকার ধ্বংসের জন্য ডিজাইন করা। এই বোমা শক্তিশালী বিস্ফোরণের মাধ্যমে মাটির নিচে স্থাপনাগুলোতে প্রবেশ করে তা ধ্বংস করে দেয়। এই বোমার ব্যবহার যুদ্ধের গতিপথে পরিবর্তন আনে, কারণ এটি প্রচলিত বোমার চেয়ে অনেক বেশি গভীর ও শক্তিশালী আঘাত হানে।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও দ্বিপাক্ষিক সংঘাত
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পারস্পরিক হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিমান হামলা চালায়, তারপরে ইরান পাল্টা হামলা চালায়। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের মিত্র হিসেবে সরাসরি সংঘাতে প্রবেশ করল। এই নতুন হামলা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
এই হামলার পর বিশ্বমঞ্চে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক দেশ এই হামলাকে আন্তর্জাতিক শান্তি বিরুদ্ধ ও উত্তেজনা বৃদ্ধি করার কার্যক্রম হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই হামলার তদন্তের দাবি জানিয়েছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে নতুন করে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সিগন্যাল বিডির বিশ্লেষণ:
যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নির্মূল করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হলেও এটি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে। ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর উপর এই আক্রমণ ইরানের প্রতিরক্ষা নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করবে। তাছাড়া, ভবিষ্যতে আরও সংঘর্ষের আশঙ্কা বেড়ে গেছে, যা বিশ্বশান্তির জন্য বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক কমিউনিটি এখন প্রত্যাশা করছে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও উত্তেজনা কমানোর জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ ত্বরান্বিত হবে। তবে সাম্প্রতিক এই হামলা বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করল এবং প্রমাণ করল যে, পারমাণবিক প্রযুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে।