নেতানিয়াহু থাকবে না, ইরান থাকবে : রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট

রাশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের নেতার মন্তব্যে আলোড়ন, ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচির সমালোচনা
রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একদিন থাকবেন না, কিন্তু ইরান ঠিকই টিকে থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা ও পারমাণবিক ইস্যুতে এমন মন্তব্য করে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছেন তিনি।
মেদভেদেভের বক্তব্য: কী বলেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট
শনিবার (২২ জুন) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে মেদভেদেভ বলেন, “নেতানিয়াহু একদিন বিদায় নেবে। কিন্তু ইরান থাকবে। ইসরায়েলের গোপন পারমাণবিক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তত্ত্বাবধানে আনতে হবে।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন তেলআবিবের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি গ্রহণযোগ্য হবে, অথচ তেহরানের জন্য হবে না? তার এই বক্তব্য ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকদের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসরায়েল ও ইরানের পারমাণবিক ইস্যু: পটভূমি
দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল তার পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে নীরব নীতি বজায় রাখছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কখনও স্বীকার করেনি যে, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। অন্যদিকে, ইরান সব সময়ই দাবি করে আসছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো এবং বিশেষত ইসরায়েল বারবার অভিযোগ করেছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।
মেদভেদেভের মন্তব্য তাই এই বিতর্কিত প্রসঙ্গকে আরও উসকে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
মেদভেদেভের মন্তব্যে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য ইরানের প্রতি মস্কোর সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। এটি মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অবস্থানকেও স্পষ্ট করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলেক্সেই পুশকভ বলেন, “মেদভেদেভের বক্তব্য কেবল নেতানিয়াহুকে নয়, সমগ্র পশ্চিমা জোটের নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
অন্যদিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও, দেশটির একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার প্রভাব
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মেদভেদেভের এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ইতিমধ্যেই গাজা, লেবানন সীমান্ত এবং রেড সি-তে যে উত্তেজনা চলছে, সেখানে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। বিশেষ করে রাশিয়া যখন প্রকাশ্যে ইরানের পক্ষে কথা বলছে, তখন ইসরায়েল ও মস্কোর সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাশিয়ার অবস্থান: পুতিন সরকারের নীতি প্রতিফলন?
মেদভেদেভ বর্তমানে রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ফলে তার এই বক্তব্য অনেকেই পুতিন সরকারের নীতিরই প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন। মস্কো অনেক দিন ধরেই তেহরানকে কৌশলগত মিত্র হিসেবে বিবেচনা করছে, বিশেষ করে সিরিয়া ও অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যীয় ইস্যুতে।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি: কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এমন মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও পারমাণবিক উত্তেজনাকে ত্বরান্বিত করতে পারে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুই পক্ষের ওপর সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। তবে বাস্তবে কতটা শান্তি আসবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
“পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নির্ভর করছে পরবর্তী কূটনৈতিক পদক্ষেপের ওপর,” মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ফারহান ইভান।
গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি
“নেতানিয়াহু একদিন বিদায় নেবে। কিন্তু ইরান থাকবে।” — দিমিত্রি মেদভেদেভ
উপসংহার
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য নতুন করে ইসরায়েল-ইরান সম্পর্ককে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, এই মন্তব্যের পর কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্ররা? বিশ্ববাসীর নজর এখন মধ্যপ্রাচ্যের আগামী দিনের দিকে।
এম আর এম – ০০০২ , Signalbd.com