বিশ্বরাজনীতিতে শনিবার সারাদিন যা যা ঘটলো

ইসরায়েলি হামলায় ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু
ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম স্বীকার করেছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও একজন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে সরকারিভাবে ইরানে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অন্তত ১২টি সামরিক স্থাপনায় হামলার দাবি করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সংঘাতের ভয়াবহতায় ইরানজুড়ে দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আইএইএ’র নিশ্চিতকরণ: পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) নিশ্চিত করেছে, ইরানের ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার হওয়ায় এ হামলাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইয়েমেনি হুথিদের হুঁশিয়ারি: লোহিত সাগরে হামলার হুমকি
সংবাদ সংস্থা এএফপি’র বরাতে জানা গেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালায়, তাহলে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে অবস্থানরত মার্কিন নৌবহরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ হুঁশিয়ারি পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক ও বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
কূটনৈতিক পর্যায়ে উত্তাপ: ফরাসি প্রেসিডেন্টের বার্তা
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ শনিবার সাংবাদিকদের জানান, তিনি ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ম্যাক্রঁ জোর দিয়ে বলেন, “ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না।” এই বক্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক অবস্থানকে পরিস্কারভাবে তুলে ধরে।
তুরস্কের কড়া অবস্থান: ইসরায়েল শান্তির পথে বাধা
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সরাসরি ইসরায়েলি নেতৃত্বকে আক্রমণ করে বলেন, “নেতানিয়াহু সরকার এই অঞ্চলে শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা।” একইসঙ্গে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এক ভাষণে বলেন, “ইসরায়েল ইরানের ওপর যে আক্রমণ চালিয়েছে তা পুরো অঞ্চলকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।”
কূটনৈতিক সংকটের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বন্ধ
আন্তর্জাতিক টানাপোড়েনের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও শনিবার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ তৈরি করেছে।
সংঘর্ষের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি
ইরানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে, ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত ইরানে ৪৩০ জন নিহত এবং অন্তত ৩,৫০০ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের দেশে এই সংঘর্ষে ২৫ জন নিহত এবং ২,৫১৭ জন আহত হয়েছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের পাশাপাশি বেসামরিক জনগণও বড় ধরণের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
আলোচনায় অনাগ্রহ: “বোমা পড়লে আলোচনা হয় না”
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি স্পষ্টভাবে বলেন, “আমাদের জনগণের ওপর যখন বোমা ফেলা হচ্ছে তখন আমরা আলোচনায় যেতে পারি না।” এক সাক্ষাৎকারে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর গভীর অবিশ্বাসের কথাও বলেন, “আমরা জানি না কিভাবে আমেরিকানদের বিশ্বাস করবো। তারা যেটা করেছে সেটা কূটনীতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
কোম শহরে ইরানি শীর্ষ কমান্ডার নিহত
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী কোম শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার সাঈদ ইজাদিকে হত্যা করেছে। এ নিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, “আমরা মাসের পর মাস ধরে এই অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।”
পারমাণবিক প্রস্তুতির ইঙ্গিত
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড শনিবার বলেছেন, “আমাদের কাছে এমন তথ্য রয়েছে যা থেকে ধারণা করা যায়, ইরান চাইলে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম।” এই মন্তব্য পশ্চিমা বিশ্বে বড় ধরনের সুরক্ষা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
কূটনৈতিক পথে সংকট নিরসনের আহ্বান
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামরিক সংঘর্ষ যতই তীব্র হোক, শেষ পর্যন্ত এই সংঘাতের সমাধান কূটনীতিতেই খুঁজতে হবে। তবে ইরান এবং ইসরায়েল উভয়ের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, তারা কেউই আপাতত আলোচনার টেবিলে ফিরতে প্রস্তুত নয়।
উপসংহার
শনিবারের ঘটনাপ্রবাহ নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণকে আরও জটিল করে তুলেছে। পারমাণবিক অস্ত্র, আন্তর্জাতিক হুমকি এবং সামরিক প্রতিক্রিয়া—সব কিছু মিলে এ দিনকে ভবিষ্যতের ইতিহাসে একটি মোড়বদলের দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে। এখন দেখার বিষয়, আগামী দিনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিভাবে এই সংকট মোকাবিলা করে এবং একটি সম্ভাব্য যুদ্ধ এড়াতে কী পদক্ষেপ নেয়।