সিসি ক্যামেরা হ্যাক করে টার্গেট নির্ধারণ করছে ইরান!

ইন্টারনেট-সংযুক্ত ক্যামেরা ইসরায়েলিদের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে
ইসরায়েলের ঘরে ঘরে নিরাপত্তা বাড়াতে বসানো সিসি ক্যামেরাগুলো এখন পরিণত হয়েছে একটি নতুন ঝুঁকিতে। তেলআবিব অভিযোগ করেছে, ইরান বারবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এই ক্যামেরাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে এবং সংগ্রহ করা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সামরিক লক্ষ্য নির্ধারণ করছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, এই ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে তেহরান ইসরায়েলের ভৌগোলিক ও সামরিক তথ্য জোগাড় করছে। বিশেষ করে মিসাইল হামলার পর কোন স্থানে আঘাত লেগেছে, কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে — তা নিরূপণ করতেও এই ফুটেজ ব্যবহৃত হচ্ছে।
সাবেক সাইবার নিরাপত্তা কর্মকর্তার সতর্কবার্তা
গত সপ্তাহে তেলআবিবে এক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের পর ইসরায়েলের সাবেক সাইবার নিরাপত্তা কর্মকর্তা রেডিওতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন। তিনি নাগরিকদের বলেন:
- বাসার সিসি ক্যামেরাগুলো অপ্রয়োজনে বন্ধ রাখতে
- যেকোনো দুর্বল ও ডিফল্ট পাসওয়ার্ড দ্রুত পরিবর্তন করতে
- সংযুক্ত ডিভাইসের নিরাপত্তা বাড়াতে নিয়মিত ফার্মওয়্যার আপডেট করতে
তাঁর মতে, ইরানি হ্যাকাররা এসব হ্যাক করা ভিডিও বিশ্লেষণ করে মিসাইল আঘাতের স্থান চিহ্নিত করছে এবং ভবিষ্যৎ হামলার জন্য নিখুঁত টার্গেট লিস্ট তৈরি করছে।
ইসরায়েলি নাগরিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক
রেডিও বার্তাগুলো ও সাইবার বিশেষজ্ঞদের সতর্কতায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, তারা বাড়ির সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে ফেলেছেন অথবা তাদের সিকিউরিটি সিস্টেম আপগ্রেড করছেন।
ইসরায়েলের সাইবার সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানায়, এই মুহূর্তে প্রতিটি নাগরিককেই তাদের সংযুক্ত ডিভাইসগুলোর সুরক্ষা জোরদার করতে হবে। যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে সাইবার হুমকির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
ইন্টারনেট-সংযুক্ত ডিভাইস: সুবিধা না ফাঁদ?
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ইসরায়েলি পরিবারেই রয়েছে ইন্টারনেট-চালিত নিরাপত্তা ক্যামেরা, যা সহজলভ্য এবং তুলনামূলকভাবে সস্তা। কিন্তু এই সুবিধাই এখন রূপ নিচ্ছে মারাত্মক বিপদে। কারণ:
- অনেক ব্যবহারকারী ডিফল্ট পাসওয়ার্ডই পরিবর্তন করেন না।
- ক্যামেরাগুলো সাধারণত অনিরাপদ সার্ভার বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।
- সাইবার আক্রমণকারীরা সহজেই এসব দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সরাসরি লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং পেতে পারে।
হ্যাকিংয়ের পূর্ব ইতিহাস: হামাসের উদাহরণ
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার আগে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস সীমান্ত এলাকার হাজার হাজার সিসি ক্যামেরা হ্যাক করেছিল। তারা সীমান্ত রক্ষীদের চলাচল, সেনা অবস্থান ও প্রতিরক্ষা কাঠামো নজরদারি করেছিল এসব ক্যামেরার মাধ্যমে।
ইসরায়েলের সাইবার প্রধান পরে নিশ্চিত করেন, বহু বছর ধরে সরকারি এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহৃত ক্যামেরাগুলো বিদেশি হ্যাকারদের নজরে ছিল। এই গোয়েন্দা কার্যক্রমেই হামাস প্রথম আঘাতের জায়গাগুলো নির্ধারণ করেছিল।
ইসরায়েলের সাইবার দফতরের হুঁশিয়ারি
ইসরায়েলের জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা দফতর জানায়, সংঘাত শুরুর পর থেকেই ইরান নিয়মিতভাবে ইন্টারনেট-সংযুক্ত ক্যামেরা হ্যাক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বলেছে, এই হ্যাকিংয়ের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ নয়, বরং ভবিষ্যতের অপারেশন পরিকল্পনা করাও।
উল্লেখযোগ্য মন্তব্য:
“আপনার বাসার নিরাপত্তা ডিভাইসই যদি শত্রুর হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তাহলে সেই নিরাপত্তা আর থাকে না।”
— ইসরায়েলি সাইবার বিশ্লেষক, রেডিও তেলআবিব
ইরানও সাইবার হামলার শিকার
এই দ্বিপাক্ষিক সাইবার যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ইরানও হামলার শিকার হচ্ছে। ইসরায়েলি হ্যাকার গ্রুপ Predatory Sparrow সম্প্রতি দাবি করেছে, তারা ইরানের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ Nobitex থেকে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার চুরি করেছে।
এছাড়া ইরানের অন্যতম দুটি ব্যাংকেও চালানো হয়েছে বড় পরিসরের সাইবার হামলা। এই ঘটনাগুলো ইরান-ইসরায়েল মধ্যকার সাইবার যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি: কী করতে পারেন নাগরিকরা?
সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
ক্যামেরার ডিফল্ট ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন
নিয়মিত ফার্মওয়্যার আপডেট করুন
ক্লাউড সংযোগ বন্ধ রাখুন, যদি প্রয়োজন না হয়
অপরিচিত আইপি/অ্যাকসেস লগ মনিটর করুন
সন্দেহজনক অ্যাক্টিভিটি হলে সাইবার কর্তৃপক্ষকে জানান
সারসংক্ষেপ:
- ইরান ইসরায়েলের বাসা-বাড়ির সিসি ক্যামেরা হ্যাক করছে বলে অভিযোগ
- হ্যাকড ফুটেজ ব্যবহার করে তারা নির্ধারণ করছে ভবিষ্যৎ হামলার লক্ষ্য
- ইসরায়েলি নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা
- আগে হামাসও একই কৌশল ব্যবহার করে সীমান্ত হামলা চালিয়েছে
- ইরান নিজেও ইসরায়েলি হ্যাকারদের সাইবার আক্রমণের শিকার
- সাইবার যুদ্ধ এখন বাস্তব যুদ্ধেরই একটি সমান্তরাল রূপ