বিশ্ব

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আসছে আতঙ্কে হার্ট অ্যাটাকে ইসরায়েলে নারী নিহত

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার সর্বশেষ পর্বে ভয়াবহ পরিণতি নেমে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের জীবনে। ইরানের ছোড়া একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার সময় আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইসরায়েলের কারমিয়েল শহরে এক নারী প্রাণ হারিয়েছেন। ঘটনাটি শুধু এই একজন নারীর মৃত্যুই নয়, বরং ইসরায়েলের হাইফা শহরসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে বেশ কিছু লোক আহত হয়েছেন এই হামলায়।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও প্রাণহানির বিস্তারিত

ইসরায়েলি জরুরি সেবা সংস্থা ‘মেগান ডেভিড অ্যাডম’ জানায়, ৫১ বছর বয়সী ওই নারী উত্তরাঞ্চলীয় কারমিয়েল শহরের একজন বাসিন্দা ছিলেন। শুক্রবার বিকালে সাইরেন বাজিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকির বার্তা ছড়িয়ে পড়তেই তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আতঙ্কে পড়ে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ঘটনাস্থলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছালেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইসরায়েল’-এর বরাতে জানা যায়, শুক্রবার দিনজুড়ে ইরান ২৫টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে। এর প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে সাইরেন বাজিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হয় এবং তারা দ্রুত বাংকার বা আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটতে থাকে।

আহতদের মধ্যে কিশোরসহ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক

এই হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর একটি ছিল হাইফা। মেগান ডেভিড অ্যাডম জানায়, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কমপক্ষে ২৩ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আশঙ্কাজনক আহতদের মধ্যে রয়েছে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর, যার শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।

তাছাড়া, ৫৪ ও ৪০ বছর বয়সী দুই ব্যক্তি শরীরের নিচের অংশে গুরুতর জখম হয়েছেন। তারা বর্তমানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

প্রতিরক্ষা বাহিনীর ব্যাখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির চিত্র

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, ইরানের এই হামলায় দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের বেশ কিছু ভবন আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। বেসামরিক অবকাঠামো এবং বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনী ধারণা করছে, ইরান অন্তত ২৫টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।

এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের সামরিক ঘাঁটি থেকে ইরান অভিমুখে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।

বুশেহরে ইসরায়েলের পাল্টা হামলা

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম ‘আইআরআইবি’-র পরিচালিত ইয়াং জার্নালিস্টস ক্লাব জানায়, হামলার পরপরই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ ইরানের বুশেহর শহরের দিকে পাল্টা হামলা শুরু করে। বুশেহর হচ্ছে ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী, যেখানে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও রয়েছে।

ইরানের সামরিক বাহিনী দ্রুত শহরটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে। ইসরায়েলি বাহিনী বুশেহরের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা এবং অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায় বলে জানা গেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার উর্ধ্বগতি

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে এই সামরিক সংঘাত শুধু এই দুই দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নিরাপত্তা সংকট তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে লেবাননের হিজবুল্লাহ, গাজায় হামাস, এবং সিরিয়া-ইরাক অঞ্চলের অন্যান্য প্রভাবশালী গোষ্ঠী এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই উত্তেজনার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক এবং তারা নিরবিচারে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

মানবিক সংকট ও আতঙ্ক

ইসরায়েলে নাগরিকরা এখন গভীর আতঙ্কে দিন পার করছেন। সাইরেনের শব্দ, রাস্তায় সামরিক টহল, ও বাংকারে অবস্থান—এ যেন রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা। বহু মানুষ ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকা ছেড়ে রাজধানী বা নিরাপদ অঞ্চলগুলোতে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, যদি এই সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক অনিশ্চয়তায় পড়বেন। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলেও একই অবস্থা। বুশেহর, শিরাজ এবং আবাদান শহরের বাসিন্দারা রাতভর আতঙ্কে ছিলেন ইসরায়েলি হামলার পর।

ভবিষ্যৎ কী?

এই হামলা-পাল্টা হামলার প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বড় পরিসরে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে, তবে বাস্তবতা বলছে, পরিস্থিতি এখন অনেক বেশি অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button