ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোপনে এক ‘ইরানে হামলার পরিকল্পনা’—বিশেষ করে ফোর্ডো পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে—অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এটি এখনও চূড়ান্তভাবে কার্যকর হয়নি, এবং তিনি এখনও অপেক্ষা করছেন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি রদ হলে তিনি হামলা বাতিল করতে পারেন। সিবিএস নিউজ এবং রাইটার্সের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই বিবৃতির ভিত্তি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে ।
ট্রাম্পের অবস্থান ও যুদ্ধের সীমা
পরিকল্পনা অনুমোদিত, সিদ্ধান্ত স্থগিত
সিবিএস-এর এক জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ট্রাম্প গত মঙ্গলবার রাতে ইরানের ওপর যে হামলার পরিকল্পনা করেছেন তা অনুমোদিত হলেও শেষে সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি এখন চাইছেন, ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত করুক ।
“আমি করতে পারি, না–ও করতে পারি”
গত বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন:
“আমি এটা করতেও পারি, না–ও করতে পারি। এক সেকেন্ড আগে সিদ্ধান্ত নিতে চাই, কারণ পরিস্থিতি বদলায়” ।
তিনি এও বলেন, ইরানকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে বিরত রাখতে যুদ্ধ প্রয়োজন হতে পারে, কারণ “দুনিয়া ফেটে যাবে” যদি তারা পারমাণবিক শক্তি অর্জন করে ।
ইরানের দৃঢ় প্রত্যাখ্যান
খামেনির ‘লড়াই শুরু’ ঘোষণা
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ট্রাম্পের “নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ” দাবি ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে বলেন:
“যেকোনো মার্কিন হস্তক্ষেপের প্রতিদান দিতে হবে। ইরানি জাতি কখনো আত্মসমর্পণ করতে পারে না” ।
তার ভাষ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মোতায়েন ও প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।
জনজীবনে প্রভাব
তেহরান থেকে প্রায় এক কোটি মানুষ পাড়ি দিচ্ছেন, শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন ।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত : বর্তমান পরিস্থিতি
ইসরায়েলি হামলা
- ইসরায়েল ব্যাপকভাবে পারমাণবিক কেন্দ্র ও ক্ষেপণাস্ত্র ওয়ার্কশপে আক্রমণ চালিয়েছে, যার মধ্যে আর্কের এরাক হেভি–ওয়াটার রিঅ্যাক্টর ও নাতানজ রয়েছে ।
- ছয় দিনের সংঘর্ষে ইরানে প্রাণহানির সংখ্যা পৌঁছে প্রায় 639, যার অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক ।
- ইসরায়েলের দাবি—তারা তেহরানের আকাশ নিয়ন্ত্রণ করছে, ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা প্রভৃতি দূর থেকে আক্রমণ করেছে ।
ইরানের পাল্টা হামলা
- ইরান প্রায় 20 টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুঁড়েছে, এমনকি হাইপারসনিক Fattah-1 ও ক্ষেপণাস্ত্র চালু করেছে বলে দাবি করেছে ।
- ইসরায়েলের লোকাল হাসপাতালে আঘাত হানা হয়েছে, তবে ব্যাপক ক্ষতি হয়নি ।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রতিক্রিয়া ও প্রস্তুতি
- USS Nimitz ও USS Carl Vinson মোতায়েন করা হচ্ছে—এছাড়াও বিমানবাহী যুদ্ধ বিমান ও ট্যাংকার ইউরোপ থেকে উপসাগরীয় অঞ্চলে যাচ্ছে ।
- মার্কিন প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইরান এই হামলার জবাবে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত করেছে ।
- পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প যেকোনো সময় নির্দেশ দিলে আমেরিকান ফোর্স প্রস্তুত থাকবে ।
কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট ও পরবর্তী পদক্ষেপ
ইউরোপের আলোচনা
জার্মানি, ফ্রান্স, বৃটেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে জেনেভা আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা মার্কিন কৌশলের অংশ ।
এছাড়াও, মার্কো রুবিও ও ডেভিড ল্যামারের বৈঠক আগামী বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে ।
জাতিসংঘে উত্তেজনা
ইরানের প্রতিনিধি নিন্দা করে বলেন, “ট্রাম্পের মিথ্যাচার ও কাপুরুষোচিত হুমকি সবচেয়ে ঘৃণিত” ।
ইরান বলছে, তারা কখনো “হোয়াইট হাউসের দরজায় মাথা নিচ্ছে” না ।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবাজি
- ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু “ধাপে ধাপে পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি নির্মূলের পথে” চলেছেন ।
পরিসংখ্যানের সারসংক্ষেপ
বিষয় | বিস্তারিত |
---|---|
ইরানে নিহতের সংখ্যা | ~639 (বেসামরিক ও সামরিক উভয়) |
ইসরায়েলে নিহত | ~24 (বেসামরিক) |
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চ | শুরুতে ~200, পরে কমে ~60 |
ডিপ্লোম্যাটিক আলোচনা | ইউরোপ–ইউএস–ইরান, জেনেভা, ওয়ারশ / ওয়াশিংটন |
প্রভাব ও ভবিষ্যৎ ধাপ
- **পারমাণবিক সংকট বৃদ্ধি**
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চতর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে ইরান তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি সামনে আসছে । - মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাহীনতা
তেলের দাম ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; সম্প্রতি দাম কিছুটা কমেছে শান্তি আলোচনার চেষ্টা দেখে । - মানবিক বিপর্যয়
তেহরানের প্রায় এক কোটি মানুষ নগর ছেড়ে পালিয়ে চলেছে, ইসরায়েলের স্কুল–বাস ডিপোতে ক্ষতি ও আহত ব্যক্তি সংবাদে এসেছে । - পারিবারিক ও রাজনৈতিক চাপ
ট্রাম্প যৌক্তিক সীমারেখায় অংশ নিতে পারেন, যা MAGA শ্রেণী ও পেন্টাগনের মধ্যে মত পার্থক্য সৃষ্টি করছে ।
সংক্ষেপে বলা যায়—ট্রাম্প ইতিমধ্যে ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন, তবে নির্ধারিত আদেশ এখনো দেননি। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। ইরানের প্রতিক্রিয়া জোরদার, যার মধ্যেই রয়েছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হলেও তীব্র সংঘাতের সম্ভাবনা অস্বীকারό করা যায় না। মানবতা, তেলের বাজার, স্থিতিশীলতা—সব কিছুই প্রশ্নবিদ্ধ।