বিশ্ব

ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় আশ্রয়কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের ঢুকতে বাধা

ইসরায়েলের তেল আবিব শহরে এক বিস্ফোরক ঘটনা

ইসরায়েলের তেল আবিব শহরের এক ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রবেশ বাধা দেওয়ার ঘটনা সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। সামার আল-রাশেদ নামের এক ফিলিস্তিনি নারী ও তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ে জিহানের গল্প সেই ঘটনার সাক্ষী। সামার তেল আবিবের এক ইহুদি অধ্যুষিত এলাকায় বসবাস করেন। গত ১৩ জুন থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সম্ভাবনার কারণে তীব্র নিরাপত্তা সতর্কতা জারি ছিল।

সেদিন সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কিত হয়ে সামার মেয়ে জিহানের হাত ধরে ভবনের আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটে যান। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রের দরজায় তাদের পথরোধ করে এক ইসরায়েলি বাসিন্দা। সামার বলেন, “আমি হিব্রু ভাষায় খুব ভালো বলতে পারি। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু তিনি আমাকে ঘৃণাভরে দেখে বললেন, ‘এটা আপনার জন্য নয়।’” এ ঘটনা ইসরায়েলি সমাজে বিদ্যমান বিভাজনের এক দুঃখজনক দৃষ্টান্ত।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভেতরেই বিভাজন

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে তেল আবিবের আকাশে বিস্ফোরণের আলোর ঝলকানি ও আওয়াজ বাতাস কাঁপিয়ে দেয়। সুরক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করলেও, সাধারণ মানুষ ভীত ও আতঙ্কিত। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রের দরজায় ফিলিস্তিনি পরিবারদের প্রবেশ না দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়ে ইসরায়েলি সমাজের মধ্যে বিদ্যমান গভীর বিভাজন আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

সামার আল-রাশেদ বলেন, “আমার মেয়ের হাত ধরে আমি যখন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলাম, তখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমরা সেখানে স্বাগত নই।” এই অভিজ্ঞতা তার জন্য মর্মান্তিক।

আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপত্তা সংকট ও জনজীবনের দুরবস্থা

ইসরায়েলজুড়ে সামরিক উত্তেজনার মধ্যে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষের চাপ বেড়েছে। অনেক পুরোনো ভবরে বাংকার না থাকায় বাসিন্দারা নীচের সিঁড়িঘর বা অন্য অস্থায়ী জায়গায় আশ্রয় নেন। বিশেষ করে তেল আবিব ও পশ্চিম জেরুজালেমের অনেক বাসিন্দা এখন নিজেদের সিঁড়িঘরে রাত কাটাচ্ছেন।

৭৪ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত সমাজকর্মী ইয়াকোভ শেমেশ জানান, “আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে কোনো বাংকার নেই, তাই আমার স্ত্রী সিঁড়িঘরেই ঘুমান। রোববার রাতে আমি ছাদে গিয়ে দেখতে পেলাম আকাশে আলো ও বিস্ফোরণের শব্দ, কিন্তু সংবাদে কোনো বিস্তারিত পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্র হয়তো আমাদের আশঙ্কার কথা জানাতে চায় না।”

মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘায়িত সংঘর্ষের পটভূমি ও মানবাধিকার পরিস্থিতি

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বহু দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলে বিদ্যমান একটি জটিল সমস্যা। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী প্রায়শই নিরাপত্তার কারণে নানা ব্যবস্থা নেয়, তবে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা মাঝে মাঝে বৈষম্যের শিকার হন। সামার আল-রাশেদের ঘটনা সেই বৈষম্যের একটি স্পষ্ট উদাহরণ।

বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ধরনের ঘটনা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এবং ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পথ

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা সাম্প্রতিককালে অনেক বেড়ে গেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরকে লক্ষ্য করে করা হলেও, এই ধরনের ঘটনা জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজনকে তীব্রতর করে তোলে।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের শান্তির জন্য উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। শান্তি স্থাপনের জন্য দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপ ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে সমাধানের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

তেল আবিবে সামার আল-রাশেদের মতো ফিলিস্তিনি নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশ বাধা দেওয়ার ঘটনা ইসরায়েলি সমাজের গভীর বিভাজনকে তুলে ধরে। সামরিক উত্তেজনার মধ্যে জনজীবন দুর্বল হয়ে পড়েছে, যেখানে নিরাপত্তার নামে জাতিগত বৈষম্য নতুন মাত্রা পাচ্ছে। এই সংকট মোকাবেলায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সমাধান অপরিহার্য।

সংক্ষিপ্ত তথ্যসূত্র ও প্রাসঙ্গিক বিষয়

  • ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে ইরান সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বার ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের হুমকি দিয়েছে।
  • ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: ইসরায়েলের আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা ‘আইরন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে সক্ষম হলেও, জনজীবনে প্রভাব কমাতে পারছে না।
  • ফিলিস্তিনি নাগরিকদের নিরাপত্তা: ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন, বিশেষ করে সংকটকালে।
  • আশ্রয়কেন্দ্র পরিস্থিতি: তেল আবিব, জেরুজালেমসহ অন্যান্য শহরে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো অত্যন্ত ভিড় ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button