বিশ্ব

ইরানে হামলা বন্ধ চায় রাশিয়া, মধ্যস্থতা করতেও প্রস্তুত

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলা রাশিয়ার তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছে। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া অবিলম্বে এসব হামলা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার জন্য কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং তা নিয়ে সংঘাত কূটনীতির মাধ্যমেই মীমাংসা করা সম্ভব।

রাশিয়ার কড়া বার্তা: ইসরায়েলের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী

মঙ্গলবার (১৭ জুন) ক্রেমলিন থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে রাশিয়া স্পষ্ট ভাষায় ইসরায়েলের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। রয়টার্সের বরাত দিয়ে জানা যায়, বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ প্রকৃতির। এর কোনো সামরিক উদ্দেশ্য নেই। ইসরায়েলের এসব হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।”

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, “বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মাথায় নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ভঙ্গ করার এক বড় কারণ।” এছাড়া, রাশিয়া সতর্ক করেছে, এই উত্তেজনা পারমাণবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে বিশ্বকে নিয়ে যেতে পারে।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা নতুন নয়। গত দশকের পর দশক ধরে দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি ও নিরাপত্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিবাদ চলেছে। ইরান নিজেকে মুসলিম বিশ্বে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে পারমাণবিক শক্তি অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছে, যা ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হুমকি হিসেবে দেখা হয়।

ইসরায়েল বারবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার অপারেশন চালিয়েছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক হামলাগুলো ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে সংঘটিত হয়েছে, যার ফলে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তীব্রতর হয়েছে।

রাশিয়া: মধ্যস্থতায় প্রস্তুত

মঙ্গলবারের বিবৃতিতে রাশিয়া আরও জানিয়েছে যে, তারা ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের সমাধানে মধ্যস্থতার ভূমিকা নিতে প্রস্তুত। গতকাল, ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেছে, “আমরা শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে চাই। দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানো সম্ভব।”

বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম শক্তিধর রাশিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়ার মধ্যস্থতার প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে রাশিয়ার কড়া অবস্থান বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। অনেক দেশ ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা কমানোর জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন এই সংঘাত বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসার কথা জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার মধ্যস্থতার প্রস্তাব কেবল যুদ্ধবিরতির দিকে নিয়ে যাবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদী শান্তির সম্ভাবনাও বাড়াবে। তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে পারমাণবিক হুমকি রোধ করা সম্ভব।

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য রাশিয়ার ভূমিকা

রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সিরিয়ার সংঘাত থেকে শুরু করে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন পর্যন্ত রাশিয়ার প্রভাব ব্যাপক। বর্তমানে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের উত্তেজনা কমাতে তার ভূমিকা আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

বিশ্বের অন্য পরাশক্তিরাও যদি রাশিয়ার এই মধ্যস্থতার প্রস্তাবে সাড়া দেয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা অনেক বেশি।

বর্তমান বিশ্বে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার ও পারমাণবিক স্থাপনার নিরাপত্তা সবসময়ই একটি গুরুতর আন্তর্জাতিক ইস্যু। ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব এই ইস্যুকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে রাশিয়ার মধ্যস্থতার প্রস্তাব কূটনৈতিক সমাধানের পথে এক নতুন আলো দেখাচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একজোট প্রচেষ্টা এবং কূটনৈতিক সংলাপের বিকল্প নেই। রাশিয়ার এই পদক্ষেপ একটি ইতিবাচক সূচনা হতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button