আঞ্চলিক

সামান্য খাবারে উৎফুল্ল হয়েছিল ছোট্ট আমির, ফেরার পথেই দখলদারের গুলিতে চিরবিদায়

Advertisement

গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত বাস্তবতায় প্রতিদিনই নতুন ট্র্যাজেডি জন্ম নিচ্ছে। খাবারের খোঁজে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আসা এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা আবারও বিশ্বকে নাড়া দিল। ‘ছোট্ট আমির’ নামে পরিচিত এই শিশু সামান্য খাবার হাতে পাওয়ার পর ফেরার পথেই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হয়।

খাবারের আশায় ১২ কিলোমিটার হেঁটে আসা শিশুটি

মানবিক সহায়তার আশায় গাজা উপত্যকার একটি ত্রাণকেন্দ্রে পৌঁছাতে মাত্র ৭ বছরের ছোট্ট আমিরকে পাড়ি দিতে হয় ১২ কিলোমিটার পথ। রোদে পুড়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও খাবার মেলেনি। শেষমেশ কেন্দ্রের ভেতরে মাটিতে পড়ে থাকা সামান্য চাল আর ডাল কুড়িয়ে তা সংগ্রহ করে আনন্দিত হয়েছিল সে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনাসদস্য অ্যান্থনি আগুইলার জানান, “আমির আমার কাছে এসে ছোট ছোট হাতে হাত ছুঁয়ে দিল, আমার হাত চুমু খেয়ে ইংরেজিতে বলল – থ্যাংক ইউ। আমি বুঝতে পারছিলাম, কতটা ক্ষুধার্ত অবস্থায় এসেছে এই ছোট্ট প্রাণটা।”

ফিরতি পথে গুলিতে ঝরে গেল এক নিষ্পাপ প্রাণ

সেই আনন্দও স্থায়ী হলো না। অ্যান্থনি আগুইলারের ভাষ্য, খাবার সংগ্রহ শেষে আমির যখন অন্য বেসামরিক লোকদের সঙ্গে কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল, তখন হঠাৎ করেই ইসরায়েলি সেনারা গুলি ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ শুরু করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় আমির।

তার এই মৃত্যু সেখানে উপস্থিত মানুষদের নিস্তব্ধ করে দেয়। যে শিশুটি কিছুক্ষণ আগেও ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে মুক্তির ছোট্ট আশায় হাসছিল, সে মুহূর্তের মধ্যে নিথর দেহে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

গাজার চলমান মানবিক বিপর্যয়

গাজা উপত্যকা গত কয়েক মাস ধরে অবরুদ্ধ। খাবার, পানি, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মারাত্মক সংকট চলছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ত্রাণ কার্যক্রমও নানা প্রতিবন্ধকতায় আটকে আছে।

এমন পরিস্থিতিতে অসংখ্য শিশু প্রতিদিন খাবারের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, শিশুদের জীবনের নিরাপত্তা রক্ষার ন্যূনতম পরিবেশও গাজায় নেই।

ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

অ্যান্থনি আগুইলার বলেন, “আমি জীবনে অনেক যুদ্ধ দেখেছি, কিন্তু একটি ক্ষুধার্ত শিশুকে সাহায্য পাওয়ার পর খুশিতে ঝলমল করতে দেখা এবং তারপর মুহূর্তের মধ্যে গুলিতে মরে যেতে দেখা – এর চেয়ে ভয়ঙ্কর দৃশ্য আর নেই। সেই দিনটি গাজার আর দশটা দিনের মতোই ছিল, পার্থক্য শুধু এই যে, মৃত্যুটা এসেছিল আরও তাড়াতাড়ি।”

তার এই বর্ণনা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে শোক ও ক্ষোভের ঢেউ ওঠে।

বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ

ঘটনাটির ভিডিও ফুটেজ ও ছবিগুলো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মানবাধিকার কর্মীরা নিন্দা জানাচ্ছেন এই নৃশংসতাকে। অনেকে বলছেন, “গাজার মানুষ শুধু মানবিক সহায়তা চায়, কিন্তু তাদের ফিরতে হচ্ছে মরদেহ হয়ে।”

জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, গাজার শিশুদের জীবনের অধিকার রক্ষায় অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।

গাজায় শিশুদের অবর্ণনীয় সংগ্রাম

সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, প্রতিদিন খাবারের অভাবে গাজায় অসংখ্য শিশু অপুষ্টি ও রোগে ভুগছে। অনেকেই সামান্য খাবারের খোঁজে জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
ছোট্ট আমিরের মৃত্যু এই সংকটের চিত্র আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

সমাপ্তি

ছোট্ট আমিরের গল্প আজ গাজার নীরব কান্নার প্রতিচ্ছবি। মানবিক সহানুভূতির পৃথিবীতে এক শিশুর স্বপ্ন এভাবেই মাটিতে মিশে গেল। প্রশ্ন থেকে যায়, এই নিষ্পাপ প্রাণগুলোর ভবিষ্যৎ কে রক্ষা করবে? শান্তির সূর্যোদয় কি আর দেখা হবে এই শিশুদের জীবনে?

এম আর এম – ০৬৩৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button