বিশ্ব

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৫৯, ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত অন্তত ১৭ জন

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় গতকাল রোববার আরও ৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন ত্রাণ নিতে গিয়ে, যেখানে তারা জীবন বাঁচানোর সামান্য সহায়তার জন্য সারিবদ্ধ ছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে এই তথ্য পাওয়া গেছে, যা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে।

ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে

গাজার আল-আওদা হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্ষুধার্ত পরিবারগুলোকে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে নেৎজারিম করিডোর এলাকায় ত্রাণ কেন্দ্রে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে অন্তত তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া গাজার দক্ষিণ অংশে ত্রাণ নিতে গিয়ে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন।

গত রোববার গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক বিমান হামলায় অন্তত ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। গাজার উত্তরে অবস্থিত বেইত লাহিয়া শহরে হামলায় ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আর মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরেও অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে, গত শনিবার একক দিনে ৭৯ জন নিহত হয়েছিলেন, যেখানে অনেকেই ত্রাণ সংগ্রহ করার সময় প্রাণ হারিয়েছেন।

ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে হামলা এবং মানবিক সংকট

বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলি হামলার ঘটনা ঘটছে, যেগুলো পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। এই কেন্দ্রগুলো গাজার ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অবস্থিত। এ কারণে সেখানে ত্রাণ নিতে আসা নিরীহ মানুষের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে।

গাজার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও বাসিন্দারা এই কেন্দ্রগুলোকে ‘মানব কসাইখানা’ বলে অভিহিত করেছেন। জিএইচএফ ২৭ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে এই কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত এবং কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ

ইসরায়েলের এই বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও অনেক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় গাজার সাধারণ মানুষ দুর্ভিক্ষ ও স্বাস্থ্য সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে এই মানবিক সংকট অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা গাজায় ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে।

গাজা সংকটের পেছনের প্রেক্ষাপট

গাজা উপত্যকা ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার পাশাপাশি হামলা চালিয়ে আসছে, যার ফলে গাজার নাগরিকরা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন। ২০২৫ সালের এই সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে হাজারো ফিলিস্তিনি নিহত এবং লাখো মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।

ত্রাণকর্মীরা বলছেন, খাদ্য, ওষুধ, পানি ও চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদার তীব্র ঘাটতি চলছে গাজায়। বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও অবকাঠামো ধ্বংসের কারণে জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে এই সংকট সবচেয়ে বেশি মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

গাজার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার করুণ চিত্র

গাজায় বসবাসরত পরিবারগুলো এখন খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর জন্য ত্রাণের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। দৈনন্দিন জীবনে তারা নিরাপত্তাহীনতার মাঝে বসবাস করছে, যেখানে ত্রাণ কেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদে সাহায্য পাওয়াও এক বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিহ্ন, ত্রাণ নিতে গেলে মৃত্যু অপেক্ষা করছে।”

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা

বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্ব আগামী দিনে গাজার জন্য দ্রুত ও কার্যকর মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করা।
ত্রাণসংস্থাগুলোকে নিরাপদ পরিবেশে কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি, ইসরায়েলের হামলা বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষত ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহতের ঘটনা উদ্বেগজনক।
গাজার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার অবস্থা ভয়াবহ ও মানবিক সংকট গভীর হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ত্বরিত হস্তক্ষেপ ও সমাধানই এই সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র পথ।

এই খবরটি নিয়মিত আপডেট করা হবে। গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button