ইসরায়েল সংকটে মোদির নরম অবস্থান: কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত: মোদির ‘নিরপেক্ষ’ নীতি নিয়ে প্রশ্ন
ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়েছে, বিশেষ করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের অবস্থান নিয়ে। গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে এক জরুরি প্রস্তাব পাশ হয়, যেখানে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা করা হয়েছিল। ১৪৯টি দেশের পক্ষে ভোট পড়লেও, ভারত ছিল ভোটদানে বিরত। এই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতিকে কেন্দ্র করে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস তীব্র সমালোচনা করেছে মোদি সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্ত।
কংগ্রেসের তীব্র আক্রমণ: ‘পররাষ্ট্রনীতি টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছে’
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি আজ টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অশোক গেহলোটের কাজকর্মে ব্যর্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর উচিত উপযুক্ত ও সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনা নিয়ে আমরা কি চিরায়ত নীতির থেকে সরে আসছি?’
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র আরও তীব্র সুরে সরকারকে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “৬০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যেখানে অধিকাংশ শিশু ও নারী, তারা গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত, সেখানে ভারত নীরব। এই নীরবতা লজ্জাজনক এবং হতাশাজনক।” প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, ভারতের উচিত মানবিক কণ্ঠস্বর ফিরে পাওয়া, যা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সাংবিধানিক আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতেও ভারত নীরব: আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রশ্নের মুখে নরেন্দ্র মোদি সরকার
শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্প্রতি ইরানে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছে। এতে ভারত ছিল অংশগ্রহণকারী নয়, যা নিয়ে কংগ্রেসের সমালোচনা আরও তীব্র হয়েছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, ভারত ইসরায়েলের আক্রমণকে নীরব নয়, বরং মৌন সমর্থন দিচ্ছে। জয়রাম রমেশ বলেন, “ভারতের বিবৃতি পড়ে মনে হয় যেন ইরান আক্রান্ত হলেও তাকে সংযম প্রদর্শন করতে হবে, যা বাস্তবতার পরিপন্থী।”
ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক: কী কারণ?
ভারতের ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দিনে দিনে গভীর হচ্ছে। কৃষি, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাকিস্তানে হামলার সময় ইসরায়েল ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা প্রথম জানিয়েছিল, যা ভারত-ইসরায়েল সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক।
মোদির ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইসরায়েলের বিরোধিতা করা সম্ভব না মনে করছে। ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ভারতকে অনেক সময় কূটনৈতিকভাবে নরম অবস্থান নিতে হয়।
রাজনীতিতে রাজনৈতিক হিসেব: কংগ্রেস বনাম বিজেপি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কংগ্রেসের এই সমালোচনা বিজেপির জন্য রাজনৈতিক সুবিধাও বয়ে আনতে পারে। বিজেপি মনে করে, কংগ্রেস ফিলিস্তিন-ইরান ইস্যুতে সংখ্যালঘু ভোটদের আবেগকে টেনে নিয়ে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করার চেষ্টা করছে। বিজেপি ধারণা করে, এই অবস্থান তাদের হিন্দুত্ববাদী মেরুকরণের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করবে।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বেই কংগ্রেসের এই মনোভাব আরও জোরদার হতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন।
ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতিতে এখন এক সংকটাপন্ন অবস্থায়। রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করলেও, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের ভূমিকা স্পষ্ট হওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের উচিত একপেশে অবস্থান না নিয়ে মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সামগ্রিক ও বস্তুনিষ্ঠ নীতি গ্রহণ করা। এছাড়া, ভারতের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ও নিরাপত্তা বিবেচনা করে পররাষ্ট্রনীতির ব্যালেন্স বজায় রাখা প্রয়োজন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট ও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার মাঝেও ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিচ্ছে। মোদি সরকারের নরম বা নিরপেক্ষ নীতিকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের সমালোচনা তীব্র হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপে ভারত একটি শক্তিশালী, স্পষ্ট ও মানবিক কণ্ঠস্বর ফিরে পেতে বাধ্য হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ভবিষ্যতে কী রূপ নেবে, তা দেখার অপেক্ষায় গোটা দেশ এবং বিশ্ব।