বিশ্ব

ইসরায়েলের পরিকল্পনা এবং ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা,আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ইসরায়েল। তবে এই পরিকল্পনাকে শেষ মুহূর্তে আটকে দিয়েছেন তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে — কেন ইসরায়েল এই খবর যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল? আর কেন যুক্তরাষ্ট্র এ খবর ফাঁস করল? ইসরায়েল কি ইরানকে বার্তা দিতে চেয়েছিল, নাকি ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলকে সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছিল? এসব প্রশ্ন নিয়েই নানা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।

ইসরায়েলের পরিকল্পনা এবং ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা: বিষয়টির পেছনের কারণ

তেল আবিব থেকে আল জাজিরাকে কথা বলেছেন ইসরায়েলের সাবেক কূটনীতিক আলন পিঙ্কাস, যিনি এই ঘটনার নানা দিক বিশ্লেষণ করেছেন। তার মতে, ইসরায়েল হয়তো ইরানের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ভয় দেখানোর জন্যই যুক্তরাষ্ট্রকে এই তথ্য দিয়েছে। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো ইসরায়েলকে এখনই এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। পিঙ্কাস বলেন, ‘আমার মনে হয়, বিষয়টি খুব বেশি কিছু নয়, তবে এটি ইরানকে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয় যে ইসরায়েল তাদের সর্বোচ্চ নেতাকে লক্ষ্য করছে।’

ইসরায়েলের এই পরিকল্পনার খবরটি এমন এক সময় সামনে এসেছে, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার নিয়েছে। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় ইরানের অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। এতে ইরানের সেনাপ্রধানসহ অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১৯ জন মারা গেছেন।

ট্রাম্পের ভূমিকা: কেন তিনি পরিকল্পনাটি আটকে দিলেন?

রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরান এখনো পর্যন্ত কোনো আমেরিকানকে হত্যা করেনি, তাই আমরা ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলা চালানোর বিষয়ে খুব সতর্ক।’ এর অর্থ, ট্রাম্প পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে দিচ্ছেন না। যদিও ট্রাম্প নিজে স্পষ্টভাবে এই খবর নিশ্চিত করেননি, তিনি নিয়মিত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন।

নেতানিয়াহু বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার মুখ খুলেননি। ফক্স নিউজে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অনেক ভুয়া খবর ছড়িয়েছে, অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলা হয়েছে যা সত্য নয়। আমি এসব নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’ তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ ধরনের পরিকল্পনা “কখনো আলাপের বিষয়ই হয়নি।”

ইসরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ: কবে থামে?

এই সংঘাত বন্ধের জন্য মধ্যস্থতা করার প্রচেষ্টা চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, ইরান ও ইসরায়েল কোনো না কোনো চুক্তিতে পৌঁছাবে। তিনি বলেছেন, ‘যেমন আমি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করেছিলাম, তেমনি এবারও আমি এ কাজ করব।’

তবে ইরান ইতোমধ্যেই যুদ্ধবিরতির কথায় রাজি হয়নি। মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও ওমানকে জানানো হয়েছে যে, ইরান ইসরায়েলের হামলার সম্পূর্ণ জবাব না দেওয়া পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি আলোচনা করবে না।

ইসরায়েলি হামলার পেছনে কারণ এবং ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

ইসরায়েলের এই হামলার পেছনে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার উদ্দেশ্য। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েল ব্যাপক হামলা চালিয়েছে এবং শীর্ষ নেতাদের হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সেই পরিকল্পনাকে আটকে দেয়। এর ফলে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বহুগুণে বেড়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরণের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা প্রকাশ হওয়া এবং তা আটকে দেয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন ধরণের কূটনৈতিক টানাপোড়েনের সূচনা করেছে। ইসরায়েল ও আমেরিকার মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে, তার গভীরতা ও জটিলতা আরও প্রকাশ পেয়েছে।

খামেনি হত্যা পরিকল্পনার সম্ভাব্য প্রভাব

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা শুধুমাত্র এক দেশীয় বিষয় নয়। এটি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা এবং বিশ্ব রাজনীতির ভবিষ্যতেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যদি ইসরায়েল এমন এক পদক্ষেপ গ্রহণ করত, তা ইরানকে উত্তেজিত করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকেও অস্থিতিশীল করে তুলত। তাই ট্রাম্প প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতি সাময়িক হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়েছে।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত এখনো চলমান। ইসরায়েলের পরিকল্পনা ফাঁস হওয়া এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায় তা আটকে দেওয়া আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, কখনো কখনো কূটনৈতিক সতর্কতা বড় কোনও আঘাত রোধ করতে পারে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পরবর্তী ধাপগুলো কী হবে, তা বিশ্ববাসী উত্তেজনার সঙ্গে নজর রাখছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button