ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ইসরায়েলিদের কণ্ঠে আতঙ্ক-ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা

২০২৫ সালের ১৪ জুন শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের তেল আবিব, রামাত গান এবং রিশন এলাকার ওপর বৃষ্টি হয়ে পড়ে। একের পর এক বিস্ফোরণে বহু বহুতল ভবন ধ্বংস হয়, শতাধিক মানুষ আহত ও তিনজন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের নাগরিকরা আতঙ্ক ও শোকের মধ্যে দিয়ে এ ঘটনা পার করছেন।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পেছনের কারণ ও প্রেক্ষাপট
শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় এক বিরল এবং বড় ধরনের হামলা চালায়। এর জবাবে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ইসরায়েলকে শক্তি প্রদর্শন করে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র তারা ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও, কিছু ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে নাগরিক এলাকা এবং বাসস্থানে আঘাত হানে। এই হামলা ইসরায়েলের জন্য নতুন মাত্রার আতঙ্ক ও ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইসরায়েলি নাগরিকদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা
তেল আবিবের রিশন এলাকায় বাস করা টালি হোরেশ বলেন, “আমরা হঠাৎ এক ভয়ংকর বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনে শিহরিত হয়ে পড়ি। পুরো ভবন কেঁপে উঠেছিল। ধোঁয়ার কুয়াশায় ভরা লিভিং রুমে আমরা বন্দি হয়ে পড়ি।” উদ্ধারকর্মীরা আসার আগে প্রায় দুই ঘণ্টা তারা নিরাপদ কক্ষে অবস্থান করেন। ভবনের নিচতলার ব্যাপক ক্ষতি দেখা যায়।
রামাত গান শহরে এই হামলায় ৬৩ জন আহত হন, যাদের মধ্যে এক নারী গুরুতর আহত থেকে পরবর্তীতে মারা যান। আর রিশনে তেল আবিবের কাছে এক বয়স্ক দম্পতির মৃত্যু হয়, সঙ্গে অন্তত ২০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছে তিন মাস বয়সী শিশু।
উদ্ধারকর্মীদের দুঃসাহসিক অভিযান
ইসরায়েলের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিসের ক্যাপ্টেন ইদান চেন ওয়ালা জানান, “আমি ধ্বংসস্তূপ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে নিরাপদ হাতে তুলে দিয়েছি। কিন্তু পাশের ঘরগুলোতে এখনো মানুষ আটকা ছিল এবং আগুন লাগা অবস্থায় পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল।”
কর্ণেল (অব.) মাইকেল ডেভিড, আইডিএফের হোম ফ্রন্টের প্রধান বলেন, “এই হামলার মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে আমরা অতীতে এমন দৃশ্য দেখিনি। আমরা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দুর্গত ভবন ত্যাগ করব না।”
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরীক্ষা
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তারা সাইরেন চালু করে নাগরিকদের দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর করে। তবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুরোপুরি সফল হয়নি। বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের আশপাশে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে।
নগরবাসীর মতে, এই হামলা তাদের জীবনে গভীর আতঙ্ক এবং নিরাপত্তাহীনতার বোধ নিয়ে এসেছে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা অভি গাতেনিও বলেছেন, “আমার পরিবারের সবাই নিরাপদ, তবে বাচ্চাদের জন্য এখন থেকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।”
সামরিক সংঘর্ষের উত্তেজনা ও ভবিষ্যৎ সংকট
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার এই উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক এই হামলা যুদ্ধের দিকেই ইঙ্গিত দেয়। বিশ্ব সম্প্রদায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় আহ্বান জানিয়ে আসলেও উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলতে থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটবে এবং নাগরিকদের দুর্ভোগ বাড়বে।”
বিস্তারিত তথ্য ও মূল বিষয়ের সারসংক্ষেপ
- ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে তেল আবিব, রামাত গান, ও রিশন এলাকায় ব্যাপক ধ্বংস।
- ৩ জন নিহত, প্রায় শতাধিক আহত, আহতদের মধ্যে শিশু ও প্রবীণ রয়েছে।
- ইসরায়েলের আইডিএফ বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করলেও কিছু আঘাত হানতে সক্ষম হয়।
- উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধার করছে, পরিস্থিতি এখনো সংকটাপন্ন।
- নাগরিকরা আতঙ্ক ও শোকগ্রস্ত, নিরাপত্তার জন্য ভবিষ্যতে সতর্ক থাকার আহ্বান।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাতের দ্রুত শান্তি চায়, কিন্তু উত্তেজনা কমছে না।
কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়? ইসরায়েলের নাগরিকদের পরামর্শ
১. সাইরেনের আওয়াজ পেলে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যান।
২. জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না।
৩. শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থদের বিশেষ যত্ন নিন।
৪. স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে চলুন।
৫. অব্যাহত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সাধারণ নাগরিকদের জীবনে ভয় ও শোক ছড়িয়ে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে এ সংকট মোকাবেলা না করলে আরো বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
সতর্কতা, দ্রুত উদ্ধার ও সহানুভূতি আজকের সময়ের প্রধান চাহিদা। ইসরায়েলিদের সাহসিকতা ও উদ্ধারকর্মীদের ত্যাগের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় মানবতার শক্তি সব বাধা জয় করতে পারে।