গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা নতুন করে আলোড়ন তুলেছে গাজা

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলার ঘটনা। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যেই আজ শনিবার সকালে গাজার দিক থেকেও ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এর ফলে ইসরায়েলের গাজা সীমান্তজুড়ে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, রকেটগুলো ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের খোলা এলাকায় পড়েছে, এবং এতে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
আল জাজিরার প্রতিবেদন: রাতভর সংঘর্ষের পর সকালের হামলা
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, রাতভর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার পর আজ সকালে গাজার দিক থেকেও দুটি রকেট ছোড়া হয়েছে।
সেনাবাহিনীর দাবি, এটি মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার অংশ এবং ভবিষ্যতে আরও হামলার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েল ইরানে বড় ধরনের বিমান হামলা চালায়, যার পাল্টা জবাব দেয় ইরান শনিবার ভোররাতে।
হামাসের প্রতিক্রিয়া: “ইরান দেখিয়েছে, আগ্রাসনের শাস্তি হয়”
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের এই নতুন অধ্যায়ে সরব হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত আল-রিশেক বলেন:
“ইরান প্রমাণ করেছে যে, কোনো আগ্রাসী কর্মকাাণ্ড বিনা জবাবে পার পায় না। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঠিকই তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইরান শুধু প্রতিরোধই করেনি, বরং একটি বার্তা দিয়েছে— যে-ই হামলা করবে, তাকে মূল্য চুকাতে হবে।”
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি: ইরান-ইসরায়েলের সরাসরি সংঘর্ষ
বিগত কয়েক দশকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান ‘ছায়াযুদ্ধ’ এবার রূপ নিচ্ছে সরাসরি সংঘর্ষে। গতকাল শুক্রবার রাতভর ইসরায়েল ইরানে বিমান হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান পাল্টা হামলা চালায় শনিবার ভোররাতে।
ইরানের সংবাদ সংস্থা ফারস জানিয়েছে, দেশটির একটি জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ঘোষণা দিয়েছেন, এই পাল্টা হামলা এখানেই থেমে থাকবে না। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখবে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইরানে ইসরায়েলের জন্য হুমকি এমন লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং তা চলবে।”
নতুন যুদ্ধের শঙ্কা: গাজার সম্পৃক্ততা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে
গাজা থেকে ইসরায়েলে হামলা, ইরান ও হামাসের যৌথ অবস্থান— এই সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই আরও জটিল ও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা যদি এই সংঘাতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেটি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে গাজার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে এসেছে। কিন্তু এবার যদি গাজার হামলা ইরানের সঙ্গে সমন্বিত হয়, তাহলে তা একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ-এর দিকে গড়াতে পারে।
বিশ্ব প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
আন্তর্জাতিকভাবে এই সংঘাত নিয়ে তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একাধিক দেশ শান্তির আহ্বান জানালেও, এখন পর্যন্ত দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হলে, তা গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।”
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও ফিলিস্তিন
ইরান দীর্ঘদিন ধরেই হামাসসহ নানা ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক বলে পরিচিত। অন্যদিকে, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মিত্র।
যখনই ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আক্রমণ চালায়, তখনই ইরান ও তার মিত্র গোষ্ঠীগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবারের ঘটনাও এর ব্যতিক্রম নয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলা কেবল ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্বই নয়, বরং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের একটি সমন্বিত কৌশলও হতে পারে।
সামনের দিনগুলোতে কী ঘটতে পারে?
১. গাজার সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে ইসরায়েল বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে।
২. ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টা হামলা আরও তীব্র হতে পারে।
৩. আঞ্চলিক মিত্র রাষ্ট্রগুলো, যেমন লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী, সংঘাতে জড়াতে পারে।
৪. বিশ্ববাজারে জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে, কারণ ইরান ও মধ্যপ্রাচ্য বিশ্ব জ্বালানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
ইসরায়েল, ইরান ও গাজা— এই তিন পক্ষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিশ্ব রাজনীতির জন্য নতুন সংকট তৈরি করেছে।
গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের অংশ। এই সংঘাত যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়বে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।