বিশ্ব

ধুবড়িকে বাংলাদেশে মিশিয়ে দেওয়ার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ

ধুবড়ি নিয়ে নতুন উত্তেজনা, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী আসামের ধুবড়ি জেলা সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কায় অস্থিরতার মুখে পড়েছে। স্থানীয় একটি হনুমান মন্দিরের সামনে গরুর মাথা পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

ধুবড়িকে বাংলাদেশের অংশ করতে চাইছে কেউ?

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অভিযোগ করেছেন, ‘নবীন বাংলা’ নামে একটি সংগঠন ধুবড়িকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে উসকানিমূলক পোস্টার লাগিয়েছিল। যদিও তিনি এই অভিযোগের পক্ষে স্পষ্ট কোনো প্রমাণ তুলে ধরেননি, তবে তিনি জানান এই ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।

‘শুট অ্যাট সাইট’ নির্দেশের ঘোষণাঃ

ধুবড়িতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কায়, মুখ্যমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার ঘোষণা দেন, ওই জেলায় ‘শুট অ্যাট সাইট’ অর্থাৎ বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কোনও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক গুলি করার নির্দেশ জারি করা হবে। তিনি বলেন, “রাতে বাইরে বের হওয়া বা পাথর ছোড়ার মতো কোনও ধরনের গোলযোগকারীকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ও সিআরপিএফ মোতায়েন

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ধুবড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ) ও কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। জেলার সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং যারা আইন হাতেও তুলে নিয়েছে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে জোরদার পদক্ষেপ

ধুবড়িতে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীসমূহের উসকানি ও গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চলেছে বলে অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আমাদের হাতছাড়া হতে দেব না। আমাদের সরকার এমন কোনো গোলযোগ বরদাশত করবে না।”

হনুমান মন্দিরের সামনে ঘটনাক্রম ও উত্তেজনা

গত সপ্তাহের রবিবার ধুবড়ি শহরে হনুমান মন্দিরের সামনে মাংসের টুকরো পাওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে সোমবার শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। যদিও পরের দিন তা তুলে নেওয়া হয়, কিন্তু উত্তেজনা কমার বদলে পরিস্থিতি আরও বাড়তে থাকে।

মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নজরদারি

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি নিজে সারা রাত হনুমান মন্দির পাহারা দেবেন এবং জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সমস্ত ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “ধুবড়িতে আমাদের সম্প্রীতি বজায় রাখা প্রাধান্য পাবে এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাত ঠেকাতে আমরা পূর্ণ প্রচেষ্টা চালাব।”

ধুবড়ি সংকট: প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ

ধুবড়ি জেলা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ার কারণে পূর্ব থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের শিকার হয়ে থাকে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে ইতিপূর্বেও স্থানীয় প্রশাসন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো থেকে স্পষ্ট যে, উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো সীমান্তবর্তী অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের এসব এলাকা বিশেষত অসমের ধুবড়ি ও আশেপাশের জেলা রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে সংবেদনশীল। এখানে প্রায়ই বাঙালি ও আসামি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধ এবং অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে উসকানিমূলক প্রচারণা চালানো হলে তা সহজেই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও সীমান্ত নিরাপত্তা

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়মিত নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং সীমান্ত পারাপারের কারণে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনা ঘটতে থাকে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নত হলেও সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে নিয়ন্ত্রণ কঠোর করতে হয়। সাম্প্রদায়িক সংঘাতের হাত থেকে এই অঞ্চলগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে যুগপৎ কাজ করতে হয়।

ধুবড়ির সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং বাংলাদেশ সংযোগের অপপ্রচার নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বক্তব্য ও পদক্ষেপ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর নজরদারি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে, সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সহাবস্থানের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং জেলায় আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সকল স্তরের জনগণ ও প্রশাসনের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের অশান্তি রোধ করতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button