‘আমরা সব জানতাম’, ইরানে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে মুখ খুললেন ট্রাম্প

২০২৫ সালের ১৩ জুন শুক্রবার, ইরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এবং পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বড় ধরনের সামরিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামলার পরদিন, হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “আমরা সব জানতাম। আমি চেষ্টা করেছি ইরানকে বাঁচাতে। কারণ আমি চাইতাম একটা ভালো চুক্তি হোক।”
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর এখন তেহরান-তেল আবিব এবং ওয়াশিংটন ডিসির কূটনৈতিক অবস্থান ও পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।
ট্রাম্প যা বললেন: কূটনীতি বনাম যুদ্ধ
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে তিনি আগে থেকেই অবগত ছিলেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বারবার অনুরোধ করেছিলেন যেন সামরিক পদক্ষেপের আগে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করা হয়।
তাঁর বক্তব্য,
“আমি যুদ্ধ চাই না। আমি চাই চুক্তি হোক। এখনো দেরি হয়নি।”
তবে ট্রাম্প এ-ও বলেন, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে শক্ত প্রতিক্রিয়ার দরজাও খোলা থাকবে।
অপারেশন রাইজিং লায়ন: ইসরায়েলের দুঃসাহসিক অভিযান
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এই অভিযানের নাম দিয়েছে “অপারেশন রাইজিং লায়ন”। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শুরু হওয়া এই হামলায় অংশ নিয়েছে প্রায় ২০০টি যুদ্ধবিমান। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফিন দেফরিন জানান, এক রাতেই ৮টি শহরে শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য হামলা চালানো হয়েছে তেহরানের নাতাঞ্জ এবং ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায়। ইরান দাবি করেছে, তারা দুটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গুলি করে ধ্বংস করেছে।
মৃত্যু ও ধ্বংসের মিছিল: হতাহতদের সংখ্যা
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নুরনিউজ ও ফারস নিউজ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৭৮ জন, আহত হয়েছেন ৩২৯ জন। নিহতদের মধ্যে আছেন ৬ জন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ২০ জন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার। এসব মৃত্যুর খবরে ইরানের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান: মিত্রতা ও মিতব্যয়তা
ট্রাম্প বলেন,
“আমরা ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র। তবে আমাদের কৌশল সুপরিকল্পিত এবং দ্বিমুখী। আমরা প্রকাশ্যে শক্ত অবস্থান নেই, আর আড়ালে দর কষাকষি চালাই।”
তিনি এ-ও জানান, এই হামলা তার কৌশলের অংশ ছিল। তবে তিনি সরাসরি বলেননি যে যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতেও এমন অভিযানে ইসরায়েলকে সক্রিয় সমর্থন দেবে কি না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বরাতে জানানো হয়, তারা ইরান থেকে উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে।
চুক্তির আশায় এখনো অপেক্ষায় ট্রাম্প
ট্রাম্পের মতে, এখনো সময় আছে এক শান্তিপূর্ণ চুক্তির। তিনি বলেন,
“আমি সবসময় চেয়েছি ইরানের সঙ্গে একটা সুষ্ঠু সমঝোতা হোক। আমি কখনোই যুদ্ধের পক্ষপাতী ছিলাম না।”
তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই অবস্থায় কূটনৈতিক আলোচনার সম্ভাবনা কার্যত শূন্য।
নেতানিয়াহুর ভাষ্য: “যতদিন হুমকি থাকবে, ততদিন অভিযান চলবে”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে দিয়েছেন,
“ইরান যখন পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালাবে, ততদিন পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।”
তাঁর মতে, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন মানেই ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যের জন্য অস্তিত্ব সংকট।
বিশ্লেষণ: মধ্যপ্রাচ্যে কি নতুন যুদ্ধের সূচনা?
এই হামলা শুধু ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কেই নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া খুব শিগগিরই আসতে পারে। এ ধরনের উত্তেজনা ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন ও ইরাকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তির আহ্বান জানাচ্ছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও চীন ইতিমধ্যেই একতরফা সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছে।
সংকটময় সময়, শীতল মাথায় সিদ্ধান্তের প্রয়োজন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে “সব জানতাম” কথাটি একদিকে বিশ্ব রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব ও কৌশলের ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে উদ্বেগ সৃষ্টি করে যে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আরও সরাসরি হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্ববাসী এখন অপেক্ষা করছে—এই সংঘাত শান্তিপূর্ণ আলোচনায় শেষ হবে, নাকি এক ভয়াবহ যুদ্ধের রূপ নেবে।