ভারতে বিমান দুর্ঘটনা নিহতদের পরিবারকে ১ কোটি রুপি করে দেবে টাটা গোষ্ঠী

ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর, নিহতদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তাদের প্রত্যেককে ১ কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে টাটা গোষ্ঠী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন।
ঘটনাটি ভারতজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে। ওই দুর্ঘটনায় ২৪২ জন যাত্রী নিয়ে উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়ে আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে একটি আবাসিক এলাকায় অবতরণ করে। বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানটি ছিল একটি হাসপাতাল ভবন ও একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের সংলগ্ন।
চন্দ্রশেখরনের বিবৃতি
এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এন চন্দ্রশেখরন বলেন, “এই শোকাবহ সময়ে কোনো শব্দই আমাদের দুঃখ প্রকাশের জন্য যথেষ্ট নয়। আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং আমরা তাদের পাশে আছি।”
তিনি আরও জানান, নিহতদের পরিবারের জন্য টাটা গোষ্ঠী ১ কোটি রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেবে এবং যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার পুরো ব্যয়ভার বহন করবে সংস্থাটি। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বি জে মেডিকেল কলেজের হোস্টেল পুনর্নির্মাণে টাটার পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়া হবে।
দুর্ঘটনার বিবরণ
বৃহস্পতিবার সকালে যুক্তরাজ্যের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১। এটি একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। উড্ডয়নের কিছু সময় পরই এটি কারিগরি ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি লোকালয়ে বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থলে তীব্র আগুন ধরে যায়, এবং এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, উদ্ধারকারী দল ও স্থানীয় প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। উদ্ধারকাজ শুরু হলেও, উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষের নিচে অনেকে আটকা পড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ যাত্রীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত ও আহতের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো হয়নি। তবে উদ্ধার কাজ এখনো চলছে এবং ভারতীয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও এয়ার ইন্ডিয়া ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
টাটার দায়িত্ব ও ইতিহাস
এয়ার ইন্ডিয়া ভারতের প্রথম বেসরকারি বিমান সংস্থা হিসেবে ১৯৩২ সালে যাত্রা শুরু করে ‘টাটা এয়ার সার্ভিসেস’ নামে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিখ্যাত শিল্পপতি জেআরডি টাটা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫৩ সালে ভারত সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়করণ করে এবং এটি হয়ে ওঠে দেশের জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনস।
দীর্ঘ সাত দশক রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকার পর, ২০২২ সালে টাটা গোষ্ঠীর হাতেই আবার ফিরে আসে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা। প্রায় ১৮ হাজার কোটি রুপির বিনিময়ে এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এরপর থেকেই টাটা গ্রুপ এয়ার ইন্ডিয়ার আধুনিকীকরণ এবং পরিষেবার মানোন্নয়নে কাজ শুরু করে।
টাটা গোষ্ঠী একাধারে ভারতীয় শিল্পের প্রতীক এবং মানবিক সহানুভূতির দৃষ্টান্ত। যেকোনো জাতীয় দুর্যোগ কিংবা ট্র্যাজেডির মুহূর্তে টাটার ভূমিকা সবসময় প্রশংসিত হয়েছে। এই দুর্ঘটনাতেও ব্যতিক্রম হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর এই ঘোষণায় দেশজুড়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছে টাটা গোষ্ঠী।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টাটার এই পদক্ষেপকে মানবিক ও দায়িত্বশীল বলে আখ্যায়িত করেছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিক, বিশিষ্টজনরা। অনেকেই বলছেন, “একজন প্রকৃত করপোরেট নাগরিক হিসেবে টাটার এই আচরণ ভারতীয় বাণিজ্যজগতের আদর্শ উদাহরণ।”
তদন্ত ও পরবর্তী ব্যবস্থা
ভারতের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (DGCA) এবং এয়ার ইন্ডিয়া যৌথভাবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে। বোয়িং কর্তৃপক্ষকেও তদন্তে সহায়তা করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, নিহত ও আহতদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
উপসংহার
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পুরো জাতি স্তব্ধ হয়ে গেছে। যাত্রীদের পরিবার, স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন ও দেশবাসী একসঙ্গে শোকাহত। তবে টাটা গোষ্ঠীর মতো করপোরেট সংস্থা যখন এমন মানবিক উদ্যোগ নেয়, তখন সেই শোকের মধ্যে সামান্য হলেও আশার আলো জ্বলে ওঠে। ক্ষতিপূরণ এবং চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়াও এখন সময়ের দাবি।