বিশ্ব

গাজায় ত্রাণকেন্দ্রে হামলায় ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজা উপত্যকায় ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাত এবং দক্ষিণের রাফা—এই দুই এলাকায় বিতর্কিত ত্রাণকেন্দ্র লক্ষ্য করে এই হামলা হয়।

আহতদের অধিকাংশই ক্ষুধার্ত সাধারণ মানুষ, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)’-এর বিতরণ কেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করতে এসেছিলেন। এফপির তথ্য অনুসারে, এই বিতর্কিত সংস্থার ত্রাণ নিতে গিয়ে ইতোমধ্যেই দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন

নুসেইরাতে ভয়াবহ হামলা

মধ্য গাজার নেতজারিম করিডর এলাকায় ঘটেছে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান—

“রাত দুইটা থেকেই হাজার হাজার মানুষ ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। ভোরের দিকে ইসরায়েলি ট্যাংক ও ড্রোন থেকে গুলি ছোঁড়া হয়। আমরা অন্তত ৩১টি মরদেহ এবং ২০০ জন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছি।”

তিনি আরও বলেন, এই ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলি সামরিক উপস্থিতি ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ এখন একটি “নিয়মিত কৌশল” হয়ে উঠেছে।

রাফাতেও প্রাণহানি

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি গুলিতে নিহত হন আরও ৯ জন ফিলিস্তিনি। আল-জাজিরা ও নাসের হাসপাতালের বরাতে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলি বাহিনী টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামলার কথা স্বীকার করে বলেছে, “নেতজারিম করিডর এলাকায় সেনারা সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছে”।

কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ—এই ধরনের ‘সতর্কতামূলক গুলি’ আসলে নিরস্ত্র মানুষের ওপর সরাসরি আক্রমণের নামান্তর

জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

জাতিসংঘ ইতিমধ্যে গাজাকে “পুরোপুরি দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা অঞ্চল” হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে:

“ত্রাণ প্রবেশের বাধা এবং ইচ্ছাকৃত হামলা মানবিক সহায়তার পথ বন্ধ করে দিচ্ছে। পুরো গাজাবাসী এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।”

বিতর্কিত GHF: মানবতা না রাজনৈতিক হাতিয়ার?

ঘটনাস্থলে ত্রাণ দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থিত সংগঠন GHF (Gaza Humanitarian Foundation), যাকে ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনিদের অনেকে ‘রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন।

সমালোচকদের দাবি—

  • GHF পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম আসলে গাজার উপরে ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ কৌশলের অংশ
  • এই সংস্থা ইসরায়েলি সামরিক নিরাপত্তার সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ বিতরণ করছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ হামলার শিকার হচ্ছে।

মার্কিন কূটনীতিকের বিতর্কিত প্রস্তাব

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে আরও বিতর্ক ছড়িয়েছে ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি-এর মন্তব্য ঘিরে। তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে মুসলিম দেশগুলোকে নিজেদের কিছু জমি ছেড়ে দিতে বলেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন:

“মুসলিম দেশগুলোর কাছে ইসরায়েলের জমির চেয়ে ৬৪৪ গুণ বেশি ভূমি আছে। তাদের মধ্যে কেউ ফিলিস্তিনিদের জন্য জায়গা দিতে পারবে না?”

হাকাবির এই প্রস্তাবকে আরববিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ‘ভয়ঙ্কর ও নীতিবিরোধী’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।

এছাড়া, তিনি পশ্চিম তীরকে ইহুদি ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ‘জুদিয়া ও সামারিয়া’ বলেও অভিহিত করেন—যা আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত ও প্রতিক্রিয়াশীল বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত।

গাজা কি পরিকল্পিত মানবিক বিপর্যয়ের শিকার?

বর্তমানে গাজা দুই দিক থেকে আক্রান্ত—একদিকে ইসরায়েলি সামরিক আক্রমণ, অন্যদিকে বিতর্কিত আন্তর্জাতিক ত্রাণনীতির ফলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়ছে।

মানবিক ত্রাণও এখন রাজনৈতিক ও সামরিক হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ও সত্যিকার মানবিক সহায়তা—না হলে এই মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button