“লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযান ও সামরিক মোতায়েন–বিক্ষোভ”

অভিবাসনবিরোধী অভিযানের সূচনা
২০২৫ সালের ৬ জুন, লস অ্যাঞ্জেলেসের ফ্যাশন ডিসট্রিক্ট, দক্ষিণাঞ্চল ও প্যারামাউন্ট এলাকায় মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রশাসন (ICE) সহ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, এফবিআই ও ATF-এর দল একাধিক জায়গায় রেইড চালিয়ে অন্তত ১০০ জনকে আটক করে । এতে অন্যতম ছিল ফ্যাশন ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত “অ্যাম্বিয়েন্স অ্যাপারেল” ও একটি হোম ডিপো পার্কিং ইয়ার্ডে অভিযান ।
তাদের অধিকাংশ “এডমিনিস্ট্রেটিভ ইমিগ্রেশন ভায়োলেশন”-এ অভিযুক্ত, মানে বৈধ ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার মতো অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত । তবে আইনি অধিকারসহ থাকার বাসিন্দাদেরও আটক হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
বিক্ষোভ: শান্তিপূর্ব থেকে সহিংসতায়
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাত থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়। শতাধিক মানুষ রাস্তা অবরোধ ও নিকা–নষ্ট, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশি সঙ্গাযুদ্ধ করে। লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ (LAPD), ন্যাশনাল গার্ড ও ফেডারেল বাহিনী ‘স্টান গ্রেনেড’, ‘পিপার স্প্রে’ ও ‘রাবার বুলেট’ ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়ে ।
অনেক সময় বিক্ষোভকারীরা ১০১ ফ্রিওয়ে বন্ধ করে দেয়, কিছু চালকবিহীন গাড়িতে আগুন ধরানো হয়, এবং Downtown LA-র ফেডারেল ভবনের আকৃতি হওয়া জায়গাগুলো ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু হয় । LAPD জানিয়েছে, ১২০–২৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন ।
জুনিয়র শ্রম ইউনিয়ন (SEIU)‑র প্রেসিডেন্ট ডেভিড হুয়ের্তাও গ্রেপ্তার হন ও হাসপাতালে যাওয়ার পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় ।
ট্রাম্প প্রশাসনের সামরিক পদক্ষেপ
ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন মোতায়েন
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথমে ২,০০০ জন ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘোষনা দেন। পরে আরো ২,০০০ জন যুক্ত করে মোট ৪,০০০–৪,১০০ মানুষের সেনা মোতায়েন করেন ।
এরপর যুক্ত করা হয় ৭০০ সক্রিয় মেরিন সদস্য, যা ক্যাম্প পেন্ডলটন থেকে প্রেরিত হয় এবং প্রথমবারের মতো কোন গভর্নরের সম্মতি ছাড়াই ফেডারেল সেনা মোতায়েন করা হয় ।
আইনের সীমাবদ্ধতা
Posse Comitatus আইন অনুসারে মার্কিন সেনা নাগরিক আইন প্রয়োগে সরাসরি অংশ নিতে পারে না, তবে “Insurrection Act” সক্রিয় হলে তা অতিক্রম করা যায় । ট্রাম্প ফজমত অ্যাক্ট প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন, যা অনেকেই কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন ।
মারিন ও ন্যাশনাল গার্ডের অফিসিয়াল কেবল ফেডারেল সম্পত্তি ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, এবং তাদের ডিজাইনে বিক্ষোভ দমন বা গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নেই ।
খরচ
Pentagon জানিয়েছে, ৬০ দিনের এই মোতায়েন কমপক্ষে $১৩৪ মিলিয়ন খরচ হবে ।
স্থানীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া
কারফিউ ঘোষণা
Downtown LA‑তে দাঙ্গা, ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু হওয়ার পর মেয়র ক্যারেন ব্যাস মঙ্গলবার রাত ৮ টা থেকে কারফিউ ঘোষণা করেন ।
ক্যালিফোর্নিয়া সরকারের আইনি চ্যালেঞ্জ
গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম এবং অ্যাটর্নি জেনারেল রব বোন্টা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে “সংবিধান লঙ্ঘন” ও “অবৈধ ও স্বৈরশাসিত পদক্ষেপ” হিসেবে অভিহিত করে। তারা ফেডারেল আদালতে জরুরি নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন ।
এই মামলা ১০ জুন আদালতে তার শুনানি নির্ধারিত হয়েছে ।
সমালোচনামূলক বক্তব্য
- নিউসোম বলেন, “ডেমোক্রেসি হামলাতেই রয়েছে” ।
- ব্যাস ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপকে “ইচ্ছাকৃত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি” ও “ভয় সৃষ্টি” হিসেবে অভিহিত করেন ।
- জনপ্রচারক ও সামরিক বিশ্লেষক জানান, LAPD জানিয়েছে মেরিন মোতায়েন লস অ্যাঞ্জেলেসের আইন-শৃঙ্খলা প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলবে ।
কোথায় দেবে সামনের দিকে প্রভাব
বিচারিক ফলাফল
৬০ দিনের মোতায়েন ও Insurrection Act–এর সম্ভাবনা বর্তমানে বিচারাধীন। যদি আদালত ক্যালিফোর্নিয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে পরবর্তী আদেশ পেতে পারে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের এই কার্যক্রম বন্ধ করার ।
স্থানীয় মানবিক ও সামাজিক প্রভাব
- প্রায় ৯ লাখ অবৈধ অভিবাসীর বাস লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে ।
- স্থানীয় অর্থনীতি রেইড ও ভয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যবসা, কাজ ও ছাত্রজীবনে হাহাকার শুরু ।
- নিউসোম সঙ্কেত দিয়েছেন, অন্যান্য রাজ্যও পরবর্তী হতে পারে ।
জাতীয় প্রতিক্রিয়া
- নিউ ইয়র্ক, শিকাগো ও সিয়াটেলে সমর্থক বিক্ষোভ শুরু ।
- আইন ও মানবাধিকার সংগঠন শুনতে বলছে অন্যায় প্রয়োগ বন্ধ করতে।
- রাজনৈতিক মহলে একাংশ এটিকে “অভিজ্ঞতা না জানার” दुर्भ atি ব্যস্ততা হিসেবে দেখছে।
সামগ্রিক সারসংক্ষেপ
লস অ্যাঞ্জেলেসে ICE রেইড থেকে শুরু হওয়া গত কয়েকদিন ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রুপ নিয়েছে, যা ডাউনটাউন এলএ কারফিউ ও লুটপাট, স্টান গ্রেনেড ও মেরিন মোতায়েনের মধ্য দিয়ে সামরিকীকরণে পৌঁছে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন মোতায়েন নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে আইনি মাধ্যমে।
মানবিক হাম: স্থানীয় সমাজে গভীর আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
আইনি সংগ্রাম: ফেডারেল আইন বনাম সংবিধান ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের লড়াই চলছে।
ভবিষ্যৎ: আদালতে নিষেধাজ্ঞা পেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে, তবে রাজনৈতিক ও সামাজিক টানাপোড়েন ব্যাহত হবে না।
আলোচনা ও সমালোচনা সর্বাধিক সময়ের আলোচ্য বিষয়। এই প্রকৃত পরিস্থিতি ভবিষ্যতে কী রূপ নেবে—তা নির্ভর করবে বিচারিক ও রাজনৈতিক সংযমে।