বিশ্ব

জার্মানির হাসপাতালে আগুনে মৃত্যু ৩, আহত ৩৫

জার্মানির হামবুর্গ শহরের একটি হাসপাতাল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত তিনজন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩৫ জন, যাদের মধ্যে ১৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির বরাতে জানা গেছে, রোববার (১ জুন) দিবাগত রাতে মারিয়েন হাসপাতাল নামের ওই চিকিৎসা কেন্দ্রে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সময় রাত ১২টার কিছু পরে হঠাৎ করেই হাসপাতালটির নিচতলা থেকে ধোঁয়া ও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুতই তা বিস্তার লাভ করে ভবনের একাধিক কক্ষে।

অগ্নিকাণ্ডের সময়কার বিভীষিকাময় পরিস্থিতি

রাতের নিরবতা ভেঙে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। আগুনের ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে পড়ে আশপাশের ওয়ার্ডগুলো। হাসপাতালের ভিতরে থাকা রোগী, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে হুলস্থুল শুরু হয়।

হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, “সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রেখে আমরা রোগীদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আগুন এবং ধোঁয়া এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে, অনেককে সরিয়ে নিতে সময় লেগে যায়।”

জরুরি সরিয়ে নেওয়ার তৎপরতা

হামবুর্গ দমকল বাহিনীর মুখপাত্র লরেঞ্জ আর্টম্যান জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতালের কয়েকটি ইউনিটে চিকিৎসাধীন বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ এবং চলাফেরায় অক্ষম রোগী ছিলেন, যাদের সরিয়ে নেওয়া বিশেষ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, “আমাদের সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে করিডোরে আটকে পড়া রোগীদের উদ্ধার করেছেন। ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন অনেকে। রোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হুইলচেয়ারে, কিছুজনকে স্ট্রেচারে করে বাইরে নিয়ে আসা হয়। আগুন একাধিক কক্ষে ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমাদের দমকল বাহিনী তা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়।”

নিহত ও আহতদের পরিচয়

প্রাণ হারানো তিনজনের মধ্যে দুইজন ছিলেন রোগী এবং একজন হাসপাতালের এক কর্মী বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। আহত ৩৫ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতায় ভুগছেন। অন্তত ১৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের মধ্যে দুইজনকে হামবুর্গের কাছাকাছি একটি উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে।

চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সহায়তা

দুর্ঘটনার পরপরই হামবুর্গ সিটি প্রশাসন ও জার্মান রেড ক্রস উদ্ধার কাজে সহায়তা শুরু করে। আশেপাশের হাসপাতালগুলোতে তৈরি রাখা হয় বিশেষ ইউনিট যাতে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা যায়।

হাসপাতাল পরিচালক জানান, “আমরা আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আহতদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি তাদের পরিবারদেরও সব ধরণের সহায়তা প্রদান করছি।”

আগুনের কারণ এখনও অজানা

এখনও পর্যন্ত আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। হামবুর্গ পুলিশ জানিয়েছে, আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, “সিসিটিভি ফুটেজ, কর্মীদের সাক্ষ্য এবং ইলেকট্রিক সংযোগ পরীক্ষা করে আমরা আগুনের উৎস বের করার চেষ্টা করছি। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ইলেকট্রিক সার্কিটে ত্রুটি থেকে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।”

অতীতের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পুনরাবৃত্তি?

উল্লেখ্য, এর আগেও জার্মানির কয়েকটি হাসপাতালে ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে এই ঘটনার ভয়াবহতা পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। জার্মানিতে হাসপাতালের নিরাপত্তাব্যবস্থা সাধারণত উন্নত হলেও এই ঘটনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতির ঘাটতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় অধিবাসী ও রোগীদের স্বজনরা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার অভিযোগ করেছেন। একজন স্বজন বলেন, “হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যদি আরও কার্যকর হতো, তাহলে হয়তো এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।”

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

ঘটনার পরপরই হামবুর্গের মেয়র এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং নিহতদের পরিবারকে সহানুভূতি জানান। তিনি বলেন, “এই দুর্ঘটনা আমাদের জন্য এক করুণ শিক্ষা। আমরা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”

তিনি আরও জানান, “শহরের সব হাসপাতালের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিটগুলোর সংস্কার করা হবে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমবেদনার বার্তা আসতে থাকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও চিকিৎসা সংগঠন এই দুর্ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং জার্মান সরকারকে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।

উপসংহার

হামবুর্গের মারিয়েন হাসপাতালে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড একটি গভীর দুঃখজনক ঘটনা। এটি শুধু কিছু ব্যক্তির জীবন কেড়ে নেয়নি, বরং গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button