বাংলাদেশ

লাখে লাখে মানুষ জাল নথি বানালে কিছু করার থাকে না: আসিফ নজরুল

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, এক দেশে যদি কয়েক লাখ মানুষ বিদেশ যাওয়ার জন্য জাল নথি তৈরি করে, তাহলে এককভাবে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।

প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টার মন্তব্য

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বুধবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “যদি একটি দেশে কয়েক লাখ মানুষ বিদেশে যাওয়ার জন্য জাল নথি তৈরি করে, তবে একা বা কিছু সংখ্যক কর্মকর্তার জন্য এটি প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব।” তিনি আরও জানান, এ ধরনের ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত নয়, এর প্রভাব অন্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও পড়ে।

ড. আসিফ নজরুলের মতে, বিদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও প্রেরণ নিশ্চিত করার জন্য সরকার ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাসী কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স সংগ্রহ এবং নারী শ্রমিকদের নিয়মিতভাবে প্রেরণ প্রক্রিয়া।

জাল নথি ব্যবহার এবং এর প্রভাব

জাল নথি তৈরি করা কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষতিকর নয়, এটি দেশের ইমেজ ও বৈদেশিক সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশে এমন ঘটনা ঘটলে তা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।

ড. আসিফ জানান, “প্রতিটি দেশের আইন ও প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন শ্রমিকের ভুল আচরণ পুরো সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রেরণ প্রক্রিয়া সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করা প্রয়োজন।”

সরকারের পদক্ষেপ

গত এক বছরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় শ্রমিক প্রেরণ ও রেমিট্যান্স সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • প্রবাসী কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স অগ্রগতির জন্য ধারাবাহিক মনিটরিং
  • মধ্যপ্রাচ্য ও আরব আমিরাতে শ্রমবাজারে নতুন নিয়মিত প্রক্রিয়ার সূচনা
  • নারী শ্রমিকদের নিরাপদ প্রেরণ ও নিয়মিতকরণ
  • বিদেশে সমস্যায় পড়া প্রবাসীদের পুনর্বাসন ও সহায়তা

তিনি আরও জানান, জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া কিছু প্রবাসী শ্রমিক বিদেশে আটক হওয়ার পর দেশে ফিরেছে। তাদের মধ্যে অনেককে পুনরায় বিদেশে প্রেরণ করা হয়েছে, বাকিদের স্থানীয়ভাবে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।

প্রবাসীদের জন্য সতর্কতা ও দিকনির্দেশনা

ড. আসিফ নজরুল সকল প্রবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “প্রবাসে গেলে জাল নথি ব্যবহার বা অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এটি কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, দেশের ইমেজকেও হ্রাস করে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে যাতে প্রবাসীরা সুরক্ষিত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করতে পারে। এজন্য নিয়মিত শিক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।”

সামাজিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব

জাল নথি ব্যবহার শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বৈধ কর্মসংস্থানের সুযোগ কমায় এবং দেশে প্রেরিত রেমিট্যান্সেও প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “প্রতিটি অনিয়ম শুধু ব্যক্তি নয়, সমগ্র শ্রমবাজারকে প্রভাবিত করে।”

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও এ ধরনের ঘটনা সাধারণত দেশটির নৈতিকতা ও প্রশাসনের সক্ষমতার প্রশ্ন তোলে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

শ্রম ও কর্মসংস্থান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাল নথি তৈরির ঘটনা মূলত সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণের সঙ্গে সম্পর্কিত। দারিদ্র্য, সঠিক তথ্যের অভাব এবং বিদেশে উচ্চ আয়ের প্রলোভন প্রবাসীদের জাল নথি ব্যবহারে প্ররোচিত করে।

একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “সরকার ও সামাজিক সংস্থা মিলিয়ে কাজ করলে প্রবাসী শ্রমিকদের সচেতন করা সম্ভব। নিয়মিত প্রেরণ প্রক্রিয়া এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে।”

সারসংক্ষেপ  

ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, জাল নথি তৈরির সমস্যা শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি দেশের ইমেজ এবং প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি। সরকারের প্রচেষ্টা, প্রবাসীদের সচেতনতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মিলিয়ে ভবিষ্যতে এই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের পদক্ষেপ এবং প্রবাসী শ্রমিকদের সহযোগিতা ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই এটি শুধু প্রশাসনের নয়, সমগ্র সমাজের দায়িত্ব।

এম আর এম – ০৯৬০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button