আবহাওয়া

গভীর নিম্নচাপের আঘাত উপকূল অতিক্রম শুরু, ১৪ জেলায় ২-৪ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করতে শুরু করেছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে এটি খেপুপাড়া ও ভারতের সাগরদ্বীপ সংলগ্ন অঞ্চল দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করে। সন্ধ্যার মধ্যে পুরোপুরি উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

নিম্নচাপের কারণে উপকূলজুড়ে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়া। দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়ছে নদী-সাগরের জোয়ারের উচ্চতা। জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় প্রশাসনও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

১৪ জেলায় ২ থেকে ৪ ফুট জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা

আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অমাবস্যা ও নিম্নচাপের সম্মিলিত প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলসমূহে ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার অতিরিক্ত জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এতে সম্ভাব্য প্লাবনের ঝুঁকিতে রয়েছে নিম্নবঙ্গের বিস্তীর্ণ চর ও দ্বীপাঞ্চল।

জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • চট্টগ্রাম
  • কক্সবাজার
  • নোয়াখালী
  • লক্ষ্মীপুর
  • ফেনী
  • চাঁদপুর
  • ভোলা
  • বরগুনা
  • পটুয়াখালী
  • বরিশাল
  • পিরোজপুর
  • ঝালকাঠি
  • বাগেরহাট
  • খুলনা
  • সাতক্ষীরা

এছাড়া হাতিয়া ও সন্দ্বীপ উপজেলা এবং এসব জেলার সংলগ্ন চর ও দ্বীপ এলাকাও রয়েছে প্লাবনের ঝুঁকিতে।

ঝোড়ো হাওয়া ও সাগর উত্তাল

নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং দমকা হাওয়ার আকারে তা ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই ঝোড়ো হাওয়ার প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে উত্তর বঙ্গোপসাগর। তাই সব ধরনের নৌযান চলাচলে কঠোর সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সমুদ্রবন্দরে সতর্ক সংকেত

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে যদি নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী রূপ নেয়, তাহলে সংকেত বাড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।

মৎস্যজীবী ও নৌযান চালকদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পরবর্তী সম্ভাব্য পরিস্থিতি: দুর্বল হয়ে পড়বে নিম্নচাপ

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম শেষে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়বে। এটি স্থলভাগে এসে নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে এবং বৃষ্টি ঝরিয়ে শক্তি হারাবে।

তবে এর আগ পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার মানুষদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উপকূলীয় অঞ্চলে প্রস্তুতি: আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে মানুষ

ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে শত শত মানুষকে সরিয়ে আনা শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, সিপিপি কর্মী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে এই কাজ পরিচালনা করছেন।

ভোলার জেলা প্রশাসক জানান, “নিম্নচাপটি গভীর হওয়ায় আমরা বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছি। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও রয়েছে।”

রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত

নিম্নচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কর্মজীবী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাজধানীর মিরপুর, মতিঝিল, বাড্ডা, মহাখালী, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

বিশেষ সতর্কবার্তা জনসাধারণের প্রতি

আবহাওয়া অধিদফতর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর উপকূলবাসীকে নিচের বিষয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে:

  • জরুরি প্রয়োজনে ৩৩৩ নম্বরে কল করুন
  • সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান
  • মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে না যান
  • ইলেকট্রিক খুঁটি, বড় গাছ ও খোলা স্থানে অবস্থান করবেন না
  • প্রয়োজনীয় ওষুধ, পানি ও টর্চলাইট সঙ্গে রাখুন

বাংলাদেশ প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড় ও নিম্নচাপের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। এবারের গভীর নিম্নচাপ তুলনামূলকভাবে মাঝারি মাত্রার হলেও এর কারণে সম্ভাব্য জলোচ্ছ্বাস, ঝোড়ো হাওয়া ও প্লাবনের ঝুঁকি অবহেলা করার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সময়মতো সতর্কতা জারি করে যাচ্ছে, যা দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

Signalbd.com এর পক্ষ থেকে উপকূলবাসীসহ সারাদেশের মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপসংক্রান্ত যে কোনো তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button