বাংলাদেশ

পিআর পদ্ধতিতেই হবে আগামী সংসদ নির্বাচন : তাহের

Advertisement

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) পদ্ধতিতেই অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, পুরোনো সিস্টেমে ফেরার কোনো সুযোগ নেই, কারণ জনগণ এবং ছাত্র-জনতা জুলাই আন্দোলনে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল

প্রধান ঘোষণার বিবরণ

রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে ‘অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ (পিআর) পদ্ধতির আবশ্যকতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. তাহের এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, “অনেকেই বলে আমরা নির্বাচন চাই না। কিন্তু আসুন পিআর নিয়ে সরাসরি বিতর্ক করি। জনগণ যদি আপনাদের ভোট দিতে চায়, সেই সঠিক প্রতিফলন পিআর পদ্ধতিতে সম্ভব।”

ফোরামের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে এবং পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন প্রকৌশলী শামসুজ্জামান। কি-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো ড. শিব্বির আহমেদ।

পিআর পদ্ধতির গুরুত্ব

ডা. তাহের বলেন, পিআর পদ্ধতি নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ, ন্যায়সংগত এবং জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে। তিনি উল্লেখ করেন, “প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, তিনি একটি আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা দেখতে পারছি না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে তার উপর কলঙ্কের দাগ পড়বে।”

তাহের বলেন, নির্বাচনের সঠিক ফলাফল জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে এবং শুধুমাত্র বড় দল নয়, ছোট দলও সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।

নির্বাচনী পটভূমি

বাংলাদেশে অতীতে প্রচলিত ফার্স্ট-পাস্ট দ্য পোস্ট (FPTP) সিস্টেমে নির্বাচনের ফলে ছোট দল এবং সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব কমে গেছে। জামায়াতের নায়েবে আমির মনে করেন, পিআর সিস্টেম রাজনৈতিক বৈচিত্র্য এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে

জুলাই আন্দোলনের সময়, জনগণ এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন মূলত রাজনৈতিক সংস্কার ও স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিতে পরিচালিত হয়েছিল। তাহের বলেন, “মানুষের প্রত্যাশা হলো প্রথমে সংস্কার, তারপর নির্বাচন। পুরোনো পদ্ধতিতে ফেরার জন্য কেউ জীবন বাজি রাখতে চায় না।”

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

এই ঘোষণার ফলে রাজনৈতিক ও সামাজিক পর্যালোচকরা মন্তব্য করেছেন, পিআর সিস্টেম দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং ন্যায্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে

বুয়েটের ন্যানো টেকনোলজি অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক প্রকৌশলী ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, “প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন দেশে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা বাড়াবে।”

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক প্রকৌশলী ড. যুবায়ের আহমেদ মনে করেন, পিআর পদ্ধতি বিরোধী দল এবং সংখ্যালঘুদের জন্য একটি সমান সুযোগ তৈরি করবে

তুলনামূলক দিক

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, FPTP সিস্টেমে ভোটের প্রকৃত অংশগ্রহণ প্রতিফলিত হয়নি। পিআর সিস্টেমে ছোট দল এবং সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ফলে রাজনৈতিক সমতা এবং ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত হবে।

এছাড়া, পিআর পদ্ধতি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে

বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পিআর সিস্টেমে ভোটের প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খল ও গণতান্ত্রিক হবে, যা জনগণের বিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। ডা. তাহের এর বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, জুলাই আন্দোলনের মূল দাবিগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন

তিনি আরও বলেন, যে কোনো ফ্যাসিস্ট কায়েম হওয়া প্রতিরোধ করা দরকার। নির্বাচন হবে জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।

ডা. তাহেরের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে পিআর পদ্ধতিতে, যা রাজনৈতিক ও সামাজিক অংশগ্রহণের নতুন মাত্রা আনবে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং জনগণের প্রত্যাশার পূর্ণতা নিশ্চিত করতে এই পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এই পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন কবে এবং কীভাবে হবে, যা আগামী নির্বাচনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াচ্ছে।

এম আর এম – ১০২২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button