বিশ্ব

পশ্চিম তীরে মার্কিন নাগরিকের নির্মম মৃত্যু, তদন্ত দাবি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ট্যাম্পা শহরের ২০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি‑আমেরিকান নাগরিক সাইফ আল‑দিন কামেল আবদুল করিম মুসাল্লেত (Sayfollah Kamel Musallet) কে ইসরায়েলের স settlers বসতি স্থাপনকারীদের হাতে মারধরের ফলে মৃত পাওয়া গেছে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পরিবারের বরাতে নিশ্চিত করা হয়েছে ।

নিহত এবং আহতদের তথ্য

মিডিয়া ও সরকারি সূত্রে জানা গেছে, সিঞ্জিল শহরে শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা সংঘটিত হয়। একাধিক ফিলিস্তিনি আহত হবার পাশাপাশি মোহাম্মদ শালাবি নামে আরও এক প্যাসেলিস্তিনি নিহত হয়েছেন । আহতদের সংখ্যা আনুমানিক ১০ জন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ।

নিহতের জীবনী ও পরিবারে শোক

সাইফ মুসাল্লেত ট্যাম্পার একজন ছোটো ব্যবসায়ীর ছেলে, যিনি সাম্প্রতিক কালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিলিস্তিনে প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের কাছে বেড়াতে এসেছিলেন । ফাতমাহ মুহাম্মদ নামের তাঁর চাচাতো বোন সামাজিক যোগাযোগে লিখেছেন, সাইফ ছিলেন “স্তম্ভিত হাস্যোজ্জ্বল”, “উদার”, “পরিশ্রমী” ও “ভাল হৃদয়ের মানুষ” বলে ।

তাঁর বাবা বলেছেন, “এই ঘটনা এমন একটা দুঃস্বপ্ন যে কোনো পরিবারই সহ্য করতে পারে না” এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে “আমরা চাচ্ছি—তদন্ত শুরু করুন এবং যারা এই অপরাধ করেছে তাদের বিচার করুন” এরকম জোরালো দাবি জানিয়েছেন ।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা “পশ্চিম তীরে একজন মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়ে অবগত” রয়েছে, তবে পরিবারে গোপনীয়তা রক্ষার কারণে বিস্তারিত মন্তব্য থেকে বিরত রয়েছেন ।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (IDF) জানায়, পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা তদন্ত করছে। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিরা একটি ইসরায়েলি যানবাহনে পাথর নিক্ষেপ করায় ঘটনাস্থলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনী non-lethal উপায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে ।

পরিপ্রেক্ষিত ও পূর্ববর্তী ঘটনা

সন্ত্রাসবিরোধী হামলার পর ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে এ ধরনের settler violence বা বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বেড়েছে । ২০২২ সাল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অন্তত ৭–৯ জন মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু ঘটেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ ও দুই কিশোর—টাওফিক আব্দেল জলবার ও মুহাম্মদ খদুর ।

এরপরও, এ পর্যন্ত কোনো ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র কোনো স্বাধীন তদন্ত করেনি। Human rights গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে এই সাংগঠনিক উদাসীনতাকে ‘পুরনো নম্বর মাত্র’ বা অভ্যাসতই নীরব থাকা হিসেবে দেখানো হয় ।

মানবাধিকার দৃষ্টিকোণ ও আন্তর্জাতিক চাপ

একাধিক মানবাধিকার সংস্থা রিপোর্ট করে যে, ইসরায়েলের বসতি স্থাপন বেআইনি ও পরবর্তীভাবে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে সংঘটিত বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ ।

ADC (American‑Arab Anti‑Discrimination Committee) এবং CAIR (Council on American‑Islamic Relations) আমেরিকার সরকারের প্রতি সোমবার অবিলম্বে একটি আমেরিকা‑নেতৃত্বাধীন তদন্ত দাবি করেছে, যাতে দোষীদের বিচার করা হয় ।
CAIR ডেপুটি ডিরেক্টর এডওয়ার্ড আহমেন মিচেল বলেছেন, “ট্রাম্প প্রশাসন সবসময় ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দাবি করে, কিন্তু যদি ইসরায়েল কোনো মার্কিন নাগরিক হত্যা করে আর যুক্তরাষ্ট্র Prioritize না করে তাহলে এটি ‘ইসরায়েল ফার্স্ট’ প্রশাসন” হয়ে যায় ।

ভবিষ্যৎ ভাবনা ও দাবিসমূহ

  • যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও বিচার বিভাগ সাইফ মুসাল্লেত হত্যাকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখুক এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত চালাক, আন্তর্জাতিক আদর্শ অনুসারে
  • ইসরায়েলকে বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা & দোষীদের বিচারের মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে
  • জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতগুলোর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ইসরায়েলের পশ্চিম তীরে বসতি নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করা, যাতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ কমে
  • মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ভূমিকা সামনে এনে ঘটনাক্রম ও অবিচারের দাবিগুলো তুলে আনতে হবে

২০১৫ সালের পর থেকে মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে পশ্চিম তীরে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা উৎকৃষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে। একাধিক ক্ষেত্রে স্বপ্ন নয়, বাস্তব দুঃস্বপ্ন দেখছে পরিবারগুলো। এই হত্যাকাণ্ড কোনো এক ব্যক্তির মৃত্যু নয়, এটি একটি এমন ক্রমবর্ধমান নিঃসঙ্গ আক্রমণের অংশ যেখানে আমেরিকা নিজের নাগরিকদের রক্ষায় শক্তিশালী উদ্দীপনা দেখায়নি। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি, এবং বর্তমান ঘটনাটি সেই পরিবর্তনের দাবিকে আরও উস্কে দিচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button