দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা দিনাজপুরে শীতের দাপট ক্রমেই বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে নবাবগঞ্জ উপজেলায় কয়েক দিন ধরে শীতের তীব্রতা ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রার নিম্নগামী ধারা, ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করছে।
সোমবার সকাল ৯টায় দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল রোববারের ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তুলনায় প্রায় দুই ডিগ্রি কম। একই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ এবং গত ২৪ ঘণ্টায় বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার।
রাতভর কুয়াশা ও সকালে ঠান্ডা
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সন্ধ্যার পর থেকে এলাকার চারপাশে হালকা কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডা লক্ষ্য করা যায়। রাতভর কুয়াশায় ঢাকা থাকে পুরো এলাকা। যদিও সকাল হওয়ার পর সূর্যের আলোয় কিছুটা উষ্ণতা ফিরে আসে, তাই দুপুর পর্যন্ত রোদের কারণে গরম অনুভূত হলেও সন্ধ্যার পর কনকনে ঠান্ডা নেমে আসে।
উপজেলার পশ্চিম ফতেপুর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, “দিনের বেলায় সূর্যের রোদের কারণে গরম লাগে। কিন্তু সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা এতটা বেড়ে যায় যে, গায়ে শীতের কাপড় না জড়ালে বের হওয়া মুশকিল। ভোরে মাঠে কাজ করতে গেলে বিশেষ অসুবিধা হয়।”
ভাদুরিয়া এলাকার ভ্যানচালক আব্দুল হান্নান মিয়া বলেন, “সন্ধ্যার পর হালকা বাতাস ও কনকনে শীতে ভ্যান চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। রাতভর কুয়াশা থাকার কারণে সকাল পর্যন্ত যাত্রীও পাওয়া যায় না। তাই ভোরে গাড়ি চালানো অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়।”
আবহাওয়া অফিসের তথ্য
দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “আজ সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা গতকালের তুলনায় কিছুটা কম। আগামী সপ্তাহে শীত আরও বাড়তে পারে এবং তাপমাত্রা কিছুটা আরও কমতে পারে। ফলে শীতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে স্থানীয়দের প্রস্তুত থাকতে হবে।”
তিনি আরও জানান, “নবাবগঞ্জসহ জেলা জুড়ে কুয়াশা ও বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ার কারণে উষ্ণ কাপড়, গরম পানীয় ও শীত উপযোগী জীবনযাত্রা অবলম্বন করা জরুরি। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের ক্ষেত্রে ঠান্ডার কারণে বিভিন্ন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
শীতে মানুষের জীবনযাত্রার প্রভাব
নবাবগঞ্জের সাধারণ মানুষ জানান, ঠান্ডার কারণে সকালবেলা স্কুল, কলেজ ও অফিসে যাতায়াতের সময় অসুবিধা হয়। ছোট ব্যবসায়ীরা শীতজনিত কারণে বিক্রির হার কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে বাইরে কাজ করা শ্রমিক ও কৃষকরা সকালে মাঠে বা নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে কুয়াশা ও ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করতে হয়।
শীতের কারণে সকাল ও সন্ধ্যার মধ্যে ক্রমাগত তাপমাত্রার পার্থক্য মানুষকে প্রভাবিত করছে। দিনচর্যায় ঠিক মতো কাজ করা ও পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা সাধারণত রাতের জন্য গরম কাপড় ব্যবহার করেন এবং দিনের আলোয় কিছুটা স্বস্তি পান।
কৃষি ও পরিবহন খাতে প্রভাব
নবাবগঞ্জের কৃষকরা জানাচ্ছেন, শীতকাল কৃষির জন্য ভালো হলেও হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন ফসলের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে শীতকালীন শাকসবজি, ধান ও অন্যান্য ফলজ ফসলের ক্ষেত্রে রাতে তাপমাত্রা ১১–১২ ডিগ্রির নিচে নামলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পরিবহন খাতেও শীতের প্রভাব দেখা দেয়। ভ্যানচালক, অটোরিকশা চালক ও বাসযাত্রী জানান, কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে ভোরে বা সন্ধ্যায় রাস্তায় যানবাহন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়। বিশেষ করে ধোঁয়া-মিশ্রিত কুয়াশা থাকলে দূরের দৃশ্য দেখা মুশকিল হয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সতর্কতা
ডাক্তাররা শীতকালকে সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বর, ফ্লু ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের জন্য বিপজ্জনক মনে করছেন। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন তাদের জন্য ঠান্ডা আরও ঝুঁকিপূর্ণ।
ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন:
- গরম পোশাক ব্যবহার করুন।
- রাতের খাবারে হালকা ও গরম খাবার খাওয়া জরুরি।
- শীতে বাইরে বেশি বের হলে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করুন।
- শিশুদের বিশেষ যত্ন নিন।
শীত ও প্রাকৃতিক পরিবেশ
নবাবগঞ্জের এই শীতকাল সাধারণত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে তীব্র হয়ে থাকে। শীতকালে ঘন কুয়াশা, ভোরের ধোঁয়া এবং সূর্য ওঠার পর হালকা রোদ পুরো এলাকায় পরিবেশকে পরিবর্তিত করে।
প্রাকৃতিকভাবে শীতের এই পরিবর্তন জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দিনাজপুরের শীতকাল আগের তুলনায় কয়েক দিন আগে শুরু হচ্ছে এবং তাপমাত্রা নিম্নমুখী।
সামগ্রিক প্রভাব
শীতকাল নবাবগঞ্জে দৈনন্দিন জীবন, কৃষি কার্যক্রম, স্বাস্থ্য ও পরিবহন খাতে স্পষ্ট প্রভাব ফেলেছে। মানুষের জন্য গরম পোশাক, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সতর্ক যাতায়াত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় প্রশাসন ও আবহাওয়া দপ্তর নিয়মিত তাপমাত্রা ও কুয়াশার তথ্য জনগণকে জানাচ্ছে।
নবাবগঞ্জের মানুষ শীতকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। দিনের বেলা রোদ, রাতে কুয়াশা ও হালকা বাতাস—এই প্রকৃতির ছন্দেই তাদের জীবন চলছে।
MAH – 14182 I Signalbd.com



