আবহাওয়া

বঙ্গোপসাগরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ ঘনীভূত

Advertisement

বঙ্গোপসাগরে আবারও নতুন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির শঙ্কা

বঙ্গোপসাগরে আবারও নতুন একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত দুর্বল নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে বর্তমানে একটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপ এলাকায় পরিণত হয়েছে। আবহাওয়াবিদদের প্রাথমিক বিশ্লেষণে জানা গেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি নিম্নচাপে এবং পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবং আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এ ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী রূপ নিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ফলে অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা এবং পার্শ্ববর্তী উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সতর্কতা জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ই বাংলাদেশে কোনো না কোনোভাবে আবহাওয়ার প্রভাব ফেলায় দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরও বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

নিম্নচাপের বর্তমান অবস্থান

বর্তমানে নিম্নচাপটি দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ আন্দামান সাগরের নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থান করছে। ২৫ নভেম্বরের মধ্যে নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে একটি শক্তিশালী নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো। এরপর উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপের অনুকূলতার কারণে এটি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করতে পারে।

আবহাওয়া বিশ্লেষকদের মতে, সমুদ্রের উষ্ণতা এবং নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার মৌসুমী প্রবণতা এখনো সক্রিয় রয়েছে। দক্ষিণ আন্দামান সাগরের তাপমাত্রাও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য উপযোগী মাত্রায় রয়েছে।

আবহাওয়াবিদদের বিশ্লেষণ: কেন বাড়ছে ঝুঁকি

ভারতের ওড়িশা আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদ সন্দীপ পট্টনায়ক জানিয়েছেন, মালাক্কা প্রণালী ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপরে বায়ুর গতিপ্রকৃতি নিম্নচাপটিকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখছে। তিনি উল্লেখ করেন, ম্যাডেন-জুলিয়ান অসিলেশন (MJO) নামের বৈশ্বিক আবহাওয়াগত তরঙ্গ বর্তমানে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে, যা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

তার ভাষায়,
“সমুদ্রের উপরিভাগের বিস্তৃত উষ্ণ অঞ্চলে নিম্নচাপটি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করছে। এ মুহূর্তে শীতল বাতাসের অনুপ্রবেশ না থাকায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। এছাড়া প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আগত শক্তিশালী বাতাসের প্রবাহ নিম্নচাপটিকে তীব্র রূপ দেয়ার পক্ষে কাজ করছে।”

ঘূর্ণিঝড় কোন দিকে যেতে পারে?

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর গতিপথ এখনও নিশ্চিত নয়। তবে প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশা উপকূলে প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত, দমকা হাওয়া এবং সমুদ্র উত্তাল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সামগ্রিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে—

  • ২৬ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ঝড়টির তীব্রতা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • এই সময়ের মধ্যে সেটি দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে শক্তিশালী হতে পারে।
  • আবহাওয়ার সহায়ক পরিবেশ থাকলে এটি গভীর নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

সম্ভাব্য বাতাসের গতিবেগ

নিম্নচাপটি ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ বাড়তে শুরু করবে:

  • ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যা: ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার
  • ২৬ নভেম্বর: ঘণ্টায় ৬০-৭০, কখনো কখনো ৮০ কিলোমিটার
  • ২৭ নভেম্বর: ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে

এই গতিবেগ বাড়তে থাকলে সমুদ্র আরও উত্তাল হয়ে উঠবে এবং মাছ ধরার ট্রলার ও ছোট নৌযানের জন্য বিপদজনক হয়ে ওঠতে পারে।

সমুদ্রগামীদের জন্য সতর্কবার্তা

যদিও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সতর্ক সংকেত দেয়নি, তারপরও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়—

  • মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারগুলোকে গভীর সাগরে না যেতে বলা হচ্ছে
  • উপকূলীয় জেলেদের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে আগাম জানানো প্রয়োজন
  • সমুদ্রের অবস্থা পর্যবেক্ষণে স্থানীয় প্রশাসনের সজাগ থাকা জরুরি

ঘূর্ণিঝড় মৌসুম এখনো শেষ হয়নি

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়টিই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির দ্বিতীয় প্রধান মৌসুম। চলতি বছর ইতিমধ্যে কয়েকটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে কিছু শক্তিশালী রূপ নিয়েছে। তাই নভেম্বরের শেষ ভাগেও নতুন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা অস্বাভাবিক নয়।

বঙ্গোপসাগরের পরিবর্তনশীল আবহাওয়া, উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব—এসব কারণই ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশে সম্ভাব্য প্রভাব

যদিও ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়, তবু এর প্রভাবে—

  • উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রামে দমকা হাওয়া
  • মাঝে মাঝে বৃষ্টি
  • সমুদ্র উত্তাল হওয়া
  • নদী ও মোহনাসমূহে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি
  • নিম্নাঞ্চলে অস্বস্তিকর আবহাওয়া

এসব পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর অভিজ্ঞতা এবং প্রস্তুতি

বছরের অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়—যেমন রেমাল, মোখা, আসানি ইত্যাদির অভিজ্ঞতা বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি প্রস্তুত। উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন সেন্টার, স্বেচ্ছাসেবক টিম, পূর্বাভাস ব্যবস্থা আগের চেয়ে উন্নত। তবুও প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ই আলাদা, এবং এর শক্তি, গতিপথ ও প্রভাব অনেক সময় অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়ে।

তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এখনই জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি বর্তমানে ঘনীভূত হয়ে শক্তিশালী রূপ নিচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর গতিপথ এখনো নির্ধারণ হয়নি, তবে অন্ধ্র–ওড়িশা উপকূল এবং বিস্তৃত বঙ্গোপসাগর এলাকায় এটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও এর পরোক্ষ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সমুদ্রগামীদের ইতোমধ্যেই সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরবর্তী আপডেটের ওপরই নির্ভর করবে উপকূলীয় এলাকাগুলোর প্রস্তুতি।

MAH – 13946 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button