মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রোববার সকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটে ৫.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল বার্মার দাওয়ে এলাকায় ছিল।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটি অনেক দূরবর্তী এলাকাতেও অনুভূত হয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং থাইল্যান্ডের কিছু প্রান্তীয় এলাকায় এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।
ভূমিকম্পের মাত্রা ও কেন্দ্রস্থল
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ৫.৩ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি মধ্যম ধরনের। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল দাওয়ে অঞ্চলে স্থলভাগের প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল। ভূমিকম্পের কম্পন প্রায় কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি-বাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়েছেন।
ভূমিকম্পের কারণে বড় ধরনের ধ্বংস বা প্রাণহানি এখনও রিপোর্ট করা যায়নি। তবে প্রাথমিক জরিপে দেখা গেছে কিছু পুরনো বাড়ি এবং কমজোরি কাঠামোগত স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় জরুরি পরিষেবা তৎপর হয়ে উঠেছে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
মিয়ানমারের ভূ-প্রাকৃতিক ঝুঁকি
মিয়ানমার প্রায়শই ভূমিকম্প ও সুনামির ঝুঁকিতে থাকে। এটি ভারত-অস্ট্রেলিয়ান প্লেট ও ইউরেশীয় প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যার ফলে প্রায় নিয়মিতভাবে মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি অনেকাংশে প্লেট টেকটোনিক্সের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায়শই মৃদু কম্পনও কখনো কখনো বড় ধরনের ধ্বংস ডেকে আনতে পারে, বিশেষ করে যেখানে দুর্বল বা পুরনো স্থাপত্য রয়েছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রভাব
ভূমিকম্পের কম্পন থাইল্যান্ডের কিছু অংশেও অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, কিছু অঞ্চলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় নেমেছে। তবে এখানে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির খবর এখনও পাওয়া যায়নি।
মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রাথমিক প্রস্তুতি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কার্যকর হয়েছে। বিশেষ করে থাইল্যান্ড ও লাওসে জরুরি পরিষেবাগুলো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া
দাওয়ে অঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, ভূমিকম্পের কম্পন প্রায় ১০-১৫ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল। অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি ছেড়ে খোলা জায়গায় নেমে আসে। স্থানীয় স্কুল, হাসপাতাল এবং সরকারি দপ্তরগুলোতে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “প্রথমে আমরা কেবল কম্পন অনুভব করেছিলাম। তবে পরে সবাই আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি। কোন বড় ধ্বংস দেখা যায়নি, তবে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক থাকাই ভালো।”
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ
বিশ্বব্যাপী ভূতাত্ত্বিক গবেষকরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের এই অঞ্চলে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প নতুন ঘটনা নয়। ইউরোপীয়-আমেরিকান ভূতাত্ত্বিক সংস্থা বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের ভূমিকম্পের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও, বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, এই ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া খুবই কঠিন। তবে প্রাকৃতিক সতর্কতা ব্যবস্থা এবং প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ।
পূর্ববর্তী ভূমিকম্পের ইতিহাস
মিয়ানমার ও এর প্রতিবেশী অঞ্চলে অতীতে বেশ কয়েকবার শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটেছে। ২০১৫ সালে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছিল এবং বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
তবে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোতে সাধারণত প্রাণহানি কম এবং ক্ষয়ক্ষতি সীমিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও জরুরি পরিষেবাগুলোর প্রস্তুতি এখন অনেক উন্নত হয়েছে।
প্রস্তুতি ও সতর্কতা
স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকায় সব স্কুল, হাসপাতাল এবং সরকারি অফিসে জরুরি প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
মানবিক সহায়তার জন্য স্থানীয় এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সরবরাহ প্রস্তুত রেখেছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ভূমিকম্পের পরও র aftershocks বা পরবর্তী কম্পনের সম্ভাবনা থাকে। তাই জনগণকে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান
স্থানীয় প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক ভূতাত্ত্বিক সংস্থা সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে কমজোরি কাঠামো, পাহাড়ি এলাকা এবং নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের বেশি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, ভূমিকম্পের সময় সাধারণ মানুষকে কীভাবে নিরাপদ থাকতে হবে, কোন স্থানগুলোতে থাকা উচিত নয়, এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের দাওয়ে এলাকায় রোববারের ভূমিকম্প একটি মাঝারি মাত্রার ঘটনা হলেও এটি আবারও মনে করিয়ে দিল, প্রাকৃতিক বিপর্যয় কখনও আসে আকস্মিকভাবে। স্থানীয় প্রশাসন, জরুরি পরিষেবা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সীমিত হলেও সচেতনতা ও প্রস্তুতি অনিবার্য। স্থানীয় মানুষকে নিরাপদ স্থানে রাখা এবং জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়াই এখন প্রধান লক্ষ্য।
মিয়ানমার এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভূমিকম্পের প্রভাব ও প্রস্তুতি নিয়ে আরও নজরদারি চালানো হচ্ছে। জনগণকে সতর্ক রাখা, স্থাপত্যের মান উন্নয়ন করা এবং জরুরি পরিষেবার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা আগামী দিনের জন্য অপরিহার্য।
MAH – 13937 I Signalbd.com



