ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে শীতের আমেজ অনুভূত হতে শুরু করেছে। কার্তিকের শেষভাগে এসে রাজধানীর আকাশ যেন বদলে ফেলেছে নিজস্ব রঙ। হালকা কুয়াশা, ঠান্ডা বাতাস আর শুকনো আবহ—সব মিলিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে শীতের আগমনী বার্তা।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) ভোর ৬টায় ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত কয়েকদিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। সকালবেলা রাস্তায় নেমে দেখা গেছে অফিসগামী মানুষের অনেকেই পাতলা জ্যাকেট বা শাল পরে বের হয়েছেন। যানবাহনের কাঁচে জমে থাকা শিশিরও জানান দিচ্ছে শীতের আগমন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ দিনের বাকিটা সময় শহরের আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে, তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। রাজধানীর বাতাস উত্তর ও উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হচ্ছে; যা ঠান্ডার অনুভূতি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ঢাকার আজকের আবহাওয়া: কী বলছে পূর্বাভাস?
আবহাওয়া অফিসের সকাল ৭টার সর্বশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে—
- আকাশ: আংশিক মেঘলা
- আবহাওয়া: পুরোপুরি শুষ্ক
- বাতাসের দিক: উত্তর–উত্তরপশ্চিম
- বাতাসের গতি: ৬–১২ কিমি/ঘণ্টা
- দিনের তাপমাত্রা: সাধারণত অপরিবর্তিত থাকবে
- বাতাসে আর্দ্রতা: ৮৮%
- আজ সূর্যাস্ত: সন্ধ্যা ৫টা ১২ মিনিট
- আগামীকাল সূর্যোদয়: ভোর ৬টা ১৪ মিনিট
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় কোনো বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়নি।
এছাড়া শুক্রবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮.৯ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে, যা মৌসুমের অন্যতম কম তাপমাত্রা।
সারা দেশে কোথায় কেমন শীত?
গত ২৪ ঘণ্টার জাতীয় আবহাওয়ার তথ্য বলছে—
- দেশের কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি
- সর্বোচ্চ তাপমাত্রা:** কক্সবাজারে ৩৩° সেলসিয়াস**
- সর্বনিম্ন তাপমাত্রা:** তেঁতুলিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় ১৪° সেলসিয়াস**
পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গা, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, নওগাঁ, রাজশাহী অঞ্চলে শীত আরও স্পষ্ট। ভোরে ঘন কুয়াশা পড়ছে এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪–১৬ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে আসছে।
মৌসুম বিশ্লেষকদের মতে, এ বছর শীত স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা আগেই শুরু হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে এই শীত ঢাকার দিকে নেমে আসছে।
শীতের কারণ: কেন হঠাৎ কমে গেল তাপমাত্রা?
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য অনুযায়ী—
১. উত্তর থেকে নেমে আসা শুষ্ক ও ঠান্ডা বাতাস
হিমালয় বেস্টিত উত্তরাঞ্চল থেকে শুষ্ক ও ঠান্ডা হাওয়া নামতে শুরু করায় রাজধানীর তাপমাত্রা দ্রুত নিচের দিকে নামছে।
২. আকাশ পরিষ্কার থাকায় দ্রুত তাপ হারাচ্ছে বাতাস
রাতে মেঘ কম থাকায় মাটি ও বাতাস দ্রুত তাপ হারাচ্ছে। ফলে ভোরের দিকে বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।
৩. মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তিত চরিত্র
অক্টোবর–নভেম্বর হল মৌসুমি বায়ুর বদলের সময়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিদায় নেয়, উত্তর পূর্বের ঠান্ডা বায়ু প্রবেশ করে। এবারের পরিবর্তন ঘটছে ধীরগতিতে, যা শীতকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে।
ঢাকাবাসীর দৈনন্দিন জীবনে শীতের প্রভাব
► অফিস–স্কুলের পথে শীতের অনুভূতি
আজ সকাল থেকেই দেখা গেছে শিশিরভেজা রাস্তা। স্কুলগামী শিশুদের অনেকেই সোয়েটার পরে বের হয়েছে। বাসে–রাস্তায় মানুষের কথাবার্তায় উঠে এসেছে শীতের প্রসঙ্গ।
► স্বাস্থ্য পরামর্শ: এই সময়ে কী সতর্কতা জরুরি?
ডাক্তাররা বলছেন—
- হঠাৎ তাপমাত্রা কমার ফলে সর্দি–কাশি বাড়তে পারে
- সকালে কুয়াশা ও ধুলাবালির কারণে শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি থাকে
- ছোট শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন
► প্রয়োজনীয় সতর্কতা
- ভোর–রাতে বাইরে বের হলে পাতলা জ্যাকেট বা শাল ব্যবহার করুন
- কুসুম গরম পানি পান করুন
- ধুলোবালির এলাকায় মাস্ক ব্যবহার করুন
- শিশুদের ঘুম থেকে উঠানোতে তাড়াহুড়ো না করা ভালো
ঢাকার পরিবহন ও নগরজীবনে শীতের আলাদা ছোঁয়া
আজ সকাল থেকে ঢাকার সড়কগুলোতে দেখা গেছে—
- ঠান্ডার কারণে রাস্তা কিছুটা ফাঁকা
- রিকশাচালকরা পরেছেন গামছা ও সোয়েটার
- চায়ের দোকানে ভিড় বেড়েছে
- বিভিন্ন মোড়ে দেখা গেছে হালকা কুয়াশার ঘনত্ব
এছাড়া ভোরে বিআরটি, মেট্রোরেল এবং বাসস্ট্যান্ডগুলোতেও যাত্রীদের মধ্যে শীতের অনুভব ছিল সুস্পষ্ট।
আসন্ন দিনগুলোতে কেমন আবহাওয়া থাকতে পারে?
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী—
- শীত আরও বাড়তে পারে আগামী ৩–৪ দিনের মধ্যে
- উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা ১২–১৩ ডিগ্রিতে নেমে আসতে পারে
- ঢাকায় তাপমাত্রা নামতে পারে ১৬–১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে
- ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শীত আরও গাঢ় হতে পারে
এ ছাড়া ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কিছু এলাকায় হালকা শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলেও ইঙ্গিত রয়েছে।
শীতে কৃষি ও অর্থনীতির প্রভাব
বাংলাদেশের কৃষির জন্য শীতকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
- এ সময় রবি শস্য ভালো ফলন দেয়
- আলু, গম, সরিষা ও ডাল চাষে অনুকূল পরিবেশ
- তবে অতিরিক্ত কুয়াশা হলে বোরো ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
এ বছর এখন পর্যন্ত কৃষিবান্ধব আবহাওয়া বিরাজ করছে।
বসন্তের অপেক্ষা, কিন্তু শীতই এখন আলোচনার কেন্দ্র
রাজধানীর বুকে এখন শীতের হালকা হালকা ছোঁয়া। রাস্তায় হাঁটার সময় যে ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগে, তা যেন মনে করিয়ে দেয়—শীত এসে গেছে, আরও বাড়ছে ধীরে ধীরে।
অনেকেই বলছেন, ‘এতদিন গরমে হাঁসফাঁস করছিলাম। এখন অন্তত কিছুটা স্বস্তি মিলছে।’
পোশাক ব্যবসায়ীদেরও জমে উঠেছে শীতের বাজার। নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ইত্যাদি এলাকায় শীতের পোশাক কেনাবেচা বাড়ছে।
ঢাকায় নেমে আসা শীতের প্রথম আমেজ এখন শহরের প্রতিটি মানুষই উপভোগ করছে। ভোরের ঠান্ডা, কুয়াশা, মেঘলা আকাশ—সব মিলিয়ে রাজধানীর পরিবেশ যেন বদলে গেছে রাতারাতি।
আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস বলছে—পরবর্তী কয়েকদিন শীত আরও গাঢ় হবে। ফলে ঢাকার মানুষকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত হতে হবে আসন্ন শীত মৌসুমের জন্য।
শীতপ্রধান উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যেই তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১৪ ডিগ্রিতে। রাজধানীতে এখনও তেমন শীত না পড়লেও ডিসেম্বরের শুরুতেই তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সারাদেশে শীতের সজীবতা ছড়িয়ে পড়ছে—এবার সেই শীতের স্বাদ পেতে প্রস্তুত ঢাকাও।
MAH – 13795 I Signalbd.com



