ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হলেও এর প্রভাব এখনো কাটেনি। রাজধানীসহ সারাদেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার (১ নভেম্বর) রাতের মধ্যেই দেশের অন্তত ১০টি জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাতের মধ্যে ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টির আশঙ্কা
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, শনিবার বিকেল ৩টা থেকে দিবাগত রাত ১টার মধ্যে যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও সিলেটের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব অথবা পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
এসব এলাকার অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে নৌযানগুলোকে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ দুর্বল হলেও প্রভাব রয়ে গেছে
কয়েক দিন আগেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ উপকূলে আঘাত হানার পর ক্রমে দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়। তবে এর বৃষ্টি ও বায়ুর প্রভাবে এখনো সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে এখনো ব্যাপক আর্দ্রতা ও চাপের তারতম্য বজায় রয়েছে, যার ফলে বৃষ্টিপাত থামছে না। আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত এমন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃষ্টিতে ভিজছে সারাদেশ
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে।
মিরপুর, ধানমণ্ডি, বনানী, মগবাজার, উত্তরা, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় বিকেলের পর থেকেই প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়।
বৃষ্টিতে সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে যানজট দেখা দেয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, যা ছিল ১৬২ মিলিমিটার। একই সময়ে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও তেঁতুলিয়াতেই, ২০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নদীবন্দরগুলোকে সতর্ক সংকেত
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
কারণ, রাতের মধ্যে ঢাকাসহ ১০ জেলায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব দিক থেকে প্রবল বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে, যা নদীপথে চলাচলে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ফলে নদীপথে চলাচলকারী ট্রলার, লঞ্চ ও ছোট নৌযানগুলোকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
বৃষ্টিপাত অব্যাহত, আরও লঘুচাপের আশঙ্কা
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরের ওপর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় নতুন একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
এর ফলে আগামী সপ্তাহেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।
এই লঘুচাপটি সক্রিয় হলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আবারও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ঘূর্ণিঝড় আকারে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা এখনই দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
নভেম্বরেও বর্ষার আমেজ
সাধারণত নভেম্বর মাসে দেশে শীতের অনুভূতি বাড়তে শুরু করে, কিন্তু এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন।
ঘূর্ণিঝড় মোন্থা ও পরবর্তী লঘুচাপের প্রভাবে নভেম্বরের শুরু থেকেই দেশের অনেক অঞ্চলে বর্ষার আমেজ দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌসুমি বায়ুর সময়কাল ও প্রকৃতি এখন আগের তুলনায় অনেক অনিশ্চিত।
ফলে শীতের আগমনের আগে এমন অনবরত বৃষ্টি এখন অস্বাভাবিক নয়, বরং এটি জলবায়ু পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত।
সাধারণ মানুষের ভোগান্তি
অবিরাম বৃষ্টিতে রাজধানীর নিত্যদিনের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
অফিসফেরত মানুষ ভিজে বিপাকে পড়ছেন, অনেক স্থানে রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে পানি জমে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে।
ঢাকার কয়েকটি প্রধান সড়ক যেমন ফার্মগেট, বিজয় সরণি, মিরপুর রোড ও মতিঝিলে দেখা গেছে যানজটের চিত্র।
তবে অনেকের কাছে এই বৃষ্টি গরম থেকে সাময়িক স্বস্তিও এনেছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
আবহাওয়াবিদদের মতে, এই মুহূর্তে কৃষি খাতের জন্য এমন বৃষ্টি কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে অতিবৃষ্টিতে কিছু অঞ্চলে ফসল ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে।
বিশেষ করে ধান কাটা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত কৃষকদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, নৌযানগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে এবং মানুষকে অপ্রয়োজনে নদীপথে না নামতে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে
ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হলেও এর পরবর্তী প্রভাবে দেশের আবহাওয়া এখনো অস্থিতিশীল।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েক দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।
এরপর ধীরে ধীরে আকাশ পরিষ্কার হয়ে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শীতের প্রভাব বাড়বে।
তবে আপাতত ঢাকাসহ দেশের ১০ জেলায় ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় সতর্ক থাকা জরুরি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এম আর এম – ২০২৭,Signalbd.com



