পাকিস্তান-আফগান সীমান্তের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দুটি সশস্ত্র সংগঠন সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করলে সেনারা প্রতিরোধ করেছেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলি ও যুদ্ধে অন্তত ২৫ জন অস্ত্রধারী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চারজন আত্মঘাতী বোম্বার রয়েছে।
ইনটেন্স ফায়ার এক্সচেঞ্জের সময় পাকিস্তানি পক্ষ থেকে ৫ সেনা শহিদ হয়েছেন। শহিদ সেনাদের মধ্যে আছেন:
- হাবিলদার মানজুর হোসেন (৩৫)
- সিপাহী নোমান ইলিয়াস কিয়ানি (২৩)
- সিপাহী মুহাম্মদ আদিল (২৪)
- সিপাহী শাহ জেহান (২৫)
- সিপাহী আলি আশগর (২৫)
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং আইএসপিআর জানায়, “সীমান্তে এই হামলার চেষ্টা আফগান অস্থায়ী সরকারের প্রতি সন্ত্রাস মোকাবিলার দায়িত্বে সংশয় সৃষ্টি করছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্ত রক্ষা ও বিদেশি সমর্থিত সন্ত্রাস দমন করতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই সন্ত্রাসী ও সশস্ত্র সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠন ক্রমাগত অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষটি ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় ভারত সমর্থিত কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘অজম-ইস্তেহকাম’ নামের বিশেষ পরিকল্পনার আওতায় সীমান্ত রক্ষা ও অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
হতাহত ও প্রতিক্রিয়া
সংঘর্ষে পাকিস্তানি সেনাদের শহিদ হওয়ার খবর দেশজুড়ে শোক ছড়িয়ে দিয়েছে। আইএসপিআর আরও জানায়, দেশের নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্তে দায়িত্ব পালনের সময় নিজেদের জীবন বাজি রেখেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত সন্ত্রাসীদের মধ্যে অভিজ্ঞ কমান্ডারও রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সীমান্তে এমন সংঘর্ষের ফলে আফগান সীমান্ত ক্রসিংয়ে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। যদিও কাতার ও তুর্কির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, সীমান্ত বাণিজ্য এখনও বন্ধ রয়েছে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিশ্রুতি
আইএসপিআর জানায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশের সীমান্ত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তারা বিদেশি সমর্থিত সন্ত্রাস দমন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়া, সীমান্তে নতুন ধরনের হামলার প্রস্তুতি থাকায় সীমান্ত এলাকায় আরও নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, এ ধরনের অভিযান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রম কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সাম্প্রতিক সীমান্ত পরিস্থিতি
সীমান্তে সংঘর্ষের ফলে আফগান সীমান্ত ক্রসিং অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সীমান্তের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয় পক্ষ আলোচনায় যুক্ত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলার কারণে সামরিক পদক্ষেপ ও কূটনৈতিক উদ্যোগ একসঙ্গে নিতে হবে। না হলে, সীমান্ত অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফেরানো কঠিন হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সংঘর্ষের খবরটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়ছে। প্রতিবেশী দেশগুলো সীমান্ত নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতির প্রতি উদ্বিগ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে এই ধরনের সংঘাত নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজন কার্যকর নজরদারি এবং সহমর্মিতা ভিত্তিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা।
একাধিক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করছেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কঠোর প্রতিরোধ ও দ্রুত প্রতিক্রিয়ার কারণে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে।
পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ২৫ জন নিহত, যার মধ্যে ৫ পাকিস্তানি সেনা। নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্ত রক্ষা ও সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও, সীমান্তে বাণিজ্য ও জনজীবন প্রভাবিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ একসঙ্গে কার্যকর করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের সংঘাত রোধের জন্য আন্তর্জাতিক সমন্বয় অপরিহার্য।
এম আর এম – ১৯৫৭,Signalbd.com



