গতকাল (২৮ অক্টোবর) রাতের দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ প্রবল আকার ধারণ করে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়েছে। স্থানীয় আবহাওয়া সংস্থার আপডেটে বলা হয়েছে, সৃষ্টিকর্তার কেন্দ্র থেকে আশপাশে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার গতি রেকর্ড করা হয়েছে এবং প্রান্তিক এলাকাগুলোতে ১১০ কিমি পর্যন্ত পর্যন্ত বেগও ছুঁতে পারে। উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্র খুবই উত্তাল এবং মৌসুমের আগে অস্বাভাবিক উচ্চ জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
আঘাতের পর দ্রুত পরিস্থিতি
আইএমডি ও স্থানীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের বুলেটিন অনুযায়ী, মোন্থা উপকূল অতিক্রম করায় তীব্র বৃষ্টিপাত ও ভারী ঢলের ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম, কাকিনাড়া ও কলিঙ্গপত্তনমের আশপাশে রাতের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রশাসন ইতোমধ্যেই উপকূলীয় কয়েক হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং উদ্ধারদল মোতায়েন করেছে। স্কুল-কলেজ সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ট্রেন সার্ভিস কিছু অংশে বাতিল বা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
গতিপথ ও ভবিষ্যৎ প্রবণতা
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মোন্থা উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে কিছুক্ষণ পর স্থলভাগ অতিক্রম করেছে। ঘূর্ণিঝড়টির গতি ধীরে ধীরে কমলেও নিকটবর্তী স্থলভাগে ঘন বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার প্রভাবে বড় ধরনের জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল, ওড়িশা ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশে এখনও তীব্র বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা থেকেও মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বাড়ার সম্ভাবনা রাখা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা
উপকূলীয় জেলা প্রশাসনগুলো জানায়, মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশি ও উদ্ধার কার্যক্রম এবং জরুরি সেবা কেন্দ্রগুলোতে জেনারেটর, চিকিৎসা সামগ্রী ও খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা রাখা হয়েছে এবং হেল্পলাইন নম্বর চালু রয়েছে। কষ্টিপথাঞ্চলে বেড়িবাঁধের দুর্বলতা থাকায় কৃষি ফসল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে; কৃষকদের অতিরিক্ত পানি অপসারণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সমুদ্রপরিবহন ও মৎস্যজীবীদের সতর্কতা
সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর ও ১ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। জেলেদের জন্য গভীর সাগরে বিচরণ বন্ধ করে দ্রুত ঘাটে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী সমন্বিতভাবে ট্রলার ও ছোট নৌকাগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার কাজ করছে। মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সমুদ্র সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়।
সম্ভাব্য প্রভাব ও পূর্বাভাস
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোন্থার প্রভাবে উপকূলীয় অবকাঠামো, বিদ্যুত সরবরাহ এবং কৃষি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলে পানীয় জলের অভাব ও স্যানিটেশন সমস্যা দেখা দিতে পারে। বড় ধরণের ক্ষতি এড়াতে আগে থেকেই সেচ-নালায় পানি নিষ্কাশন, সেলফি নিয়ন্ত্রণ ও বিপর্যয় ঝুঁকি মানচিত্র কাজে লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সামুদ্রিক পরিবেশ সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা প্রস্তুত রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রভাবের দিকনির্দেশ
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, মোন্থার প্রভাব উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকতে পারে; ফলে উপকূলীয় জেলা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরবর্তী ৩-৫ দিনে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্যজীবী ও সমুদ্রগামী চলাচলে থাকা নৌ-যানগুলোর জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদফতরকে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন ও উদ্ধারকাজের প্রস্তুতি
আঞ্চলিক প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে তৎপরতা জোরদার করেছে। উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিস, এনডিআরএফ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও কাজ করছে। আহত বা বিপন্নদের দ্রুত চিকিৎসা ও ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্থানান্তর কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ভবিষ্যৎ ঝড়-প্রবাহের ওপর নজর রেখে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ শুরু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোন্থা দ্রুত গতিতে উপকূল অতিক্রম করায় বর্তমানে পরিস্থিতি কঠিন হলেও উদ্ধারকার্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যৎ ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টায় আবহাওয়া অফিসের আপডেট ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উপকূলবাসী, মৎস্যজীবী ও কৃষকদের ঝুঁকি কমাতে সতর্কতা অবলম্বন ও নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করা হচ্ছে। এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় দ্রুত, সমন্বিত ও পরিকল্পিত প্রস্তুতিই ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।
এম আর এম – ১৯৮১,Signalbd.com



