বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি দ্রুত শক্তি সংগ্রহ করছে এবং ‘মোন্থা’ নামের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে এটি আরও শক্তিশালী হয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, এর কেন্দ্রীয় চাপ ও বাতাসের গতিবেগ বেড়ে চলেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকায় ঘূর্ণিঝড়টি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করছে।
ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ ও সম্ভাব্য প্রভাব
প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, মোন্থা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ভারতীয় উপকূল, বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার কিছু এলাকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় এর গতিপথ আরও স্পষ্ট হবে।
বাংলাদেশের উপকূলকে তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ভাগ করে পর্যবেক্ষণ চলছে। খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট এলাকায় জলোচ্ছ্বাস ও বেড়িবাঁধ ভাঙার ঝুঁকি বেশি। বরিশাল-পটুয়াখালী-ভোলা-বরগুনা অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি আঘাতের সম্ভাবনা আছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে পাহাড়ি ঢল, টানা বর্ষণ ও সাগর উত্তাল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা
মোন্থা যদি বাংলাদেশের উপকূল ঘেঁষে আসে, তবে ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে। এতে কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা, গাছপালা উচ্ছেদ এবং ফসলের ক্ষতি ঘটতে পারে।
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলে পানীয় জলের সংকট, পশুখাদ্য অভাব এবং স্থানীয় জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। চরাঞ্চল এবং বেড়িবাঁধ দুর্বল এলাকায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে।
সমুদ্র পরিস্থিতি ও মৎস্যজীবীদের সতর্কতা
বঙ্গোপসাগর ইতোমধ্যেই উত্তাল হয়ে উঠেছে। মাছধরা নৌযান ও ট্রলারগুলোকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে বলা হয়েছে। সমুদ্রবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেতে রাখা হয়েছে।
তবে কিছু ট্রলার এখনো গভীর সমুদ্রে অবস্থান করছে। দুর্ঘটনা এড়াতে উপকূলীয় রেডিও যোগাযোগ জোরদার করা হয়েছে এবং জেলেদের সতর্কবার্তা প্রদান করা হচ্ছে।
সরকারি প্রস্তুতি ও মাঠপর্যায়ের ব্যবস্থা
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (DDM), নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসনকে পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাইক্লোন শেল্টার খোলা রাখা, আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণসামগ্রী সংরক্ষণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং ও জরুরি উদ্ধারদল স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনগুলো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
উপকূলের চরের মানুষকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র, শুকনা খাবার ও জরুরি সামগ্রী হাতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রচার চলছে। জেলেদের ঘাটে টেনে আনা, গবাদিপশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মোন্থার শক্তি বৃদ্ধির কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা মোন্থার শক্তি বৃদ্ধির প্রধান কারণ। এর কারণে এটি দ্রুত তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রীয় চাপ, অগ্রগতির গতি ও সম্ভাব্য আঘাতের দিক স্পষ্ট হবে। সতর্ক সংকেত আরও বাড়ানো বা নতুন নির্দেশনা জারি হতে পারে।
মোন্থার কারণে বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলীয় এলাকা এবং বাংলাদেশ উপকূলের কিছু অঞ্চল তীব্র ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি ও গতিপথকে ঘিরে আগামী ২৪ ঘণ্টার আপডেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ না করলে সাধারণ জনগণের জন্য বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
এম আর এম – ১৯৬৯,Signalbd.com



