বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া ‘টাইগার লাইটনিং ২০২৫’ সফলভাবে শেষ হয়েছে। এই মহড়ার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স, অ্যাম্বাসেডর ট্রেসি জ্যাকবসন। এতে দুই দেশের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব আরও মজবুত হয়েছে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
‘টাইগার লাইটনিং ২০২৫’ কী?
‘টাইগার লাইটনিং’ হলো বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত একটি যৌথ সামরিক মহড়া। এই মহড়ার উদ্দেশ্য হলো দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা ও সামরিক প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি করা। ২০২৫ সালের ‘টাইগার লাইটনিং’ মহড়াটি বিশেষভাবে জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বক্তব্য
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) তাদের ফেসবুক পেজে এই খবর নিশ্চিত করে জানায়, “যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স অ্যাম্বাসেডর ট্রেসি জ্যাকবসন ‘টাইগার লাইটনিং ২০২৫’ অনুশীলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এই মহড়া দুই দেশের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বকে আরও গভীর ও সুসংহত করেছে।”
এছাড়াও তারা উল্লেখ করে, “এই যৌথ কৌশলগত এবং সামরিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ও দক্ষ সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে।”
মহড়ার গুরুত্ব ও প্রভাব
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহযোগিতা মূলত দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির আলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘টাইগার লাইটনিং’ মহড়া শুধু দুদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যকার বন্ধুত্ব ও আস্থা বৃদ্ধি করেনি, বরং সামরিক প্রযুক্তি বিনিময় ও কৌশলগত পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
- প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের বিকাশ: এই মহড়ার মাধ্যমে দুদেশের সেনাবাহিনী একে অপরের কৌশল ও সামরিক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে ধারণা পায়, যা ভবিষ্যতে মিলিত ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করে।
- জরুরি সাড়া ক্ষমতা বৃদ্ধি: মহড়াটি এমন ধরনের পরিস্থিতির জন্য পরিকল্পিত, যেখানে তাত্ক্ষণিক এবং সমন্বিত প্রতিক্রিয়া অত্যাবশ্যক।
- আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা: দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন সংকটপূর্ণ এলাকার নিরাপত্তা বজায় রাখতে এই ধরনের মহড়া এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অন্যান্য দেশগুলোর মত বাংলাদেশ
বাংলাদেশের জন্য ‘টাইগার লাইটনিং’ মহড়া একটি বড় ধাপ সামরিক আধুনিকায়নের পথে। এর আগে ভারত, সিঙ্গাপুর ও মায়ানমারের মতো বিভিন্ন দেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের সামরিক দক্ষতা আন্তর্জাতিক স্তরে আরও পরিচিতি পেয়েছে।
সামরিক মহড়ার পেছনের কৌশলগত কারণ
বিশ্বের রাজনৈতিক ও সামরিক ভূখণ্ডে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। বড় শক্তিগুলো নিজেদের প্রতিরক্ষা ও প্রভাব বিস্তারের জন্য জোটবদ্ধ হচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই সামরিক মহড়া শুধু দুদেশের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মহড়ার সফল সমাপ্তির পর একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, “টাইগার লাইটনিং ২০২৫ এর মাধ্যমে আমরা আমাদের কৌশলগত দক্ষতা বৃদ্ধি করেছি। এই অনুশীলন দেশের সুরক্ষা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করেছে এবং আমাদের সামরিক নেতৃত্বকে নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছে।”
সামরিক প্রশিক্ষণের ভবিষ্যৎ
‘টাইগার লাইটনিং’ এর মতো যৌথ প্রশিক্ষণ ভবিষ্যতে আরো বেশি আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল অন্তর্ভুক্ত করবে বলে সেনা কর্তৃপক্ষ আশা করছে। এটি শুধুমাত্র দুদেশের সামরিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির একটি মাধ্যম নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক শক্তিকে আরো আধুনিক ও দক্ষ করে গড়ে তুলার একটি বড় সুযোগ।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক মহড়া ‘টাইগার লাইটনিং ২০২৫’ দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই মহড়ার মাধ্যমে কেবল সামরিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়নি, দুই দেশের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্কও আরো মজবুত হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের মহড়া নিয়মিত হওয়া দেশের সামরিক প্রস্তুতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় সহায়ক হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
MAH – 12059, Signalbd.com



