
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী ও অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে। শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫, আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হকের মাধ্যমে জানানো হয় যে, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু অংশে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আজ সকাল ১০টা থেকে শুরু করে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী এবং ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি এবং কিছু এলাকায় ১৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এই ধরনের বৃষ্টিপাত নদী-নালার জলমাত্রা বাড়াতে পারে এবং নিকাশি ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষ সতর্কতা:
- রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
- রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ও রাজশাহীর অধিকাংশ এলাকা এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটের অনেক এলাকায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
- বিশেষ করে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন যে, এই সময়ে নদী, খাল-বিল ও নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই স্থানীয় প্রশাসন এবং সাধারণ জনগণকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা:
দেশের অন্যান্য বিভাগে যেমন ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটে অস্থায়ীভাবে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার কিছু এলাকায় ভোর এবং সকাল বেলা ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় মানুষ বিশেষভাবে সতর্ক থাকবেন।
নদী ও জলপথের সতর্কতা:
বঙ্গোপসাগরে তীব্র মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সমুদ্রবন্দরগুলোতে জোয়ার-ভাটার সঙ্গে ভারী ঢেউ উঠতে পারে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোতে মাছ ধরার নৌকাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাত্রীবাহী নৌকা চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকতে পারে।
প্রভাবিত এলাকা ও জনজীবন:
রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা জলে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাস্তা ও ব্রীজে পানির জমাট বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
- স্থায়ী জলাশয় ও নদীর কাছাকাছি এলাকায় থাকা মানুষরা বাড়ি ত্যাগ না করে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করবেন।
- গাড়ি চালক ও পথচারীদের ভোরবেলা ও রাতে চলাচলে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।
- বৈদ্যুতিক ঝুঁকি এড়াতে বাড়ির বাইরের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখা উচিত।
- কনস্ট্রাকশন ও খোলা স্থানে কাজরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত।
প্রাকৃতিক ঘটনা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা:
বাংলাদেশে ভারী বৃষ্টিপাত সাধারণত জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে মৌসুমি বায়ুর কারণে বেশি হয়। বিশেষ করে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু অংশে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হলে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগের বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অল্প সময়ের ভারী বৃষ্টির কারণে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় এবং ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জনসাধারণের প্রস্তুতি:
- স্থানীয় বাজারে জরুরি খাদ্য, পানি এবং ওষুধের স্টক রাখা উচিত।
- শিশু ও বয়স্ক মানুষদের বিশেষভাবে সতর্ক রাখা উচিত।
- জরুরি চিকিৎসা সেবা, ডাক্তার এবং হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনের সতর্কবার্তা নিয়মিত অনুসরণ করতে হবে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কতা অনুযায়ী, দেশের তিনটি বিভাগে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত চলতে পারে। নদী, খাল-বিল ও নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা এবং জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই সাধারণ মানুষ, স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত পূর্বাভাস ও সতর্কতা অনুসরণ করলে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি কমানো সম্ভব। বিশেষ করে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সময় বাড়ি, রাস্তা, স্কুল, কলেজ ও অফিসগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্ত করতে হবে।
MAH – 13145 I Signalbd.com