আবহাওয়া

৮ বিভাগেই ভারী বৃষ্টির সতর্কতা, ভূমিধস-জলাবদ্ধতার শঙ্কা

Advertisement

বাংলাদেশের আটটি বিভাগেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী ৭২ ঘণ্টা দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাব

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ অবস্থান করছে। এর ফলে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই আবহাওয়াজনিত কারণে দেশের রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

বৃষ্টিপাতের মাত্রা ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে, আর কোথাও কোথাও তা ৮৮ মিলিমিটারের বেশি ছুঁতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।

ঢাকায় ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টি

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমে রাজধানীতে অন্যতম বেশি বৃষ্টির রেকর্ড। প্রবল বর্ষণের কারণে ঢাকা শহরের একাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মিরপুর, মালিবাগ, মতিঝিল, মুগদা, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

আজও ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামে ভূমিধসের ঝুঁকি

ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে। এর আগে বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। তাই এবারও স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায়ও জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বাকলিয়া, চাক্তাই, পতেঙ্গা ও হালিশহরে বৃষ্টির পানি জমে নাগরিক দুর্ভোগ তৈরি করতে পারে।

জলাবদ্ধতা ও নগরজীবনের ভোগান্তি

ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরে দীর্ঘদিন ধরেই বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আসছে। সড়কে পানি জমে যানজট, জনভোগান্তি, দোকানপাটে ক্ষতি, এমনকি গৃহস্থালি জীবনেও সমস্যার সৃষ্টি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলাবদ্ধতা দূর করতে দ্রুত কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। কিন্তু নানা অদক্ষতা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও খাল দখলের কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

আবহাওয়ার প্রভাব গ্রামীণ অর্থনীতিতে

শুধু শহরাঞ্চল নয়, গ্রামাঞ্চলেও টানা বৃষ্টিপাতের বড় প্রভাব পড়ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় আমন ধান, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক কৃষক জমিতে পানি জমে ফসল ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন।

অন্যদিকে, অতিবৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেলে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে কুমার নদ, আড়িয়াল খাঁ, মেঘনা ও তৎসংলগ্ন নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পরিবহন খাতে প্রভাব

ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ঢাকার বাইরের মহাসড়কগুলোতেও বৃষ্টির কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

একই সঙ্গে লঞ্চ ও ফেরি চলাচলেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং ভোলা-বরিশাল রুটে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

পরিবেশবিদ ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌসুমি বৃষ্টির ধরণ ও তীব্রতায় পরিবর্তন ঘটছে। আগের তুলনায় হঠাৎ ভারী বৃষ্টি বা অতি বৃষ্টি এখন বেশি দেখা যায়। এটি পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস এবং নগরে জলাবদ্ধতা তৈরি করছে।

তাদের মতে, দুর্যোগ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা ছাড়া বাংলাদেশের জন্য বিকল্প নেই।

সতর্কবার্তা ও করণীয়

আবহাওয়া অধিদপ্তর সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

  • পাহাড়ি এলাকায় যারা বাস করেন, তাদের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এড়িয়ে চলার অনুরোধ করা হয়েছে।
  • নগরবাসীকে অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
  • কৃষকদের ফসল রক্ষায় আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

বাংলাদেশের আট বিভাগজুড়ে টানা বৃষ্টিপাত আগামী কয়েকদিন জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। জলাবদ্ধতা, যানজট, ভূমিধস ও কৃষি ক্ষতি – সব মিলিয়ে জনগণকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে। তাই সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি।

MAH – 13096 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button