আবহাওয়া

ভারী বৃষ্টিতে মিরপুরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা, যান চলাচলে ধীরগতি

ঢাকার মিরপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে বেশ কিছু সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মিরপুর-১০, মিরপুর-১ এবং বি আর টি এ এলাকায় পানি জমে যাওয়ায় স্বাভাবিক যান চলাচলে উল্লেখযোগ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির মাত্রা এমন ছিল যে, যানবাহনের ধীরগতি ছাড়া পথচারীদেরও চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।

বৃষ্টির কারণে শহরে সৃষ্টি হলো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি

ঢাকা মহানগরীর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে আকাশে মেঘের ভারী চাপ এবং হঠাৎ ঝরানো বৃষ্টির কারণে শহরের নীচু এলাকা যেমন মিরপুর, কেরানীগঞ্জ, ও গাবতলী এলাকায় জল জমে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরের অনিয়মিত নিকাশি ব্যবস্থা ও বৃষ্টির হঠাৎ প্রবলতা মিলিত হয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

মিরপুরে জলাবদ্ধতার প্রভাব

মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মিরপুরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যেমন মিরপুর-১০, মিরপুর-১ এবং বিআরটিএ রোডে জলাবদ্ধতার কারণে যান চলাচল খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে। বিশেষত দুপুরের সময় এটি শ্রমজীবী মানুষ এবং স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, “বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার মাঝখানে পানি জমতে শুরু করেছে। গাড়ি চলাচল দেরিতে হচ্ছে, হেঁটে চলতে ও অনেক কষ্ট হচ্ছে।”

ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে

মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ডিসির নির্দেশে ট্রাফিক টিম পানির তীব্রতা ও যানজট মোকাবেলায় অব্যাহতভাবে কাজ করছে। তারা বলেন, “আমরা জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরাসরি কাজ করছি। এছাড়া বিপজ্জনক স্থানগুলিতে যানবাহনকে বিকল্প পথে চালনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

তারা আরও জানিয়েছেন, কিছু এলাকা এখনও পানি মুক্ত হয়নি, কিন্তু ধীরে ধীরে পানি নেমে যাচ্ছে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা চলছে।

জলাবদ্ধতার কারণে কি কি সমস্যা হচ্ছে?

১. যান চলাচলে ধীরগতি: গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে জল জমে যাওয়ায় গাড়ি ও বাস চলাচল ধীরগতি হচ্ছে।
২. পদচারণায় সমস্যা: পথচারীরা জলাচ্ছন্ন সড়ক পেরোতে কষ্ট পাচ্ছেন।
৩. অর্থনৈতিক প্রভাব: ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরা কাজে পৌঁছাতে দেরি করছেন, যা অর্থনৈতিক কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলছে।
৪. স্বাস্থ্য ঝুঁকি: জলাবদ্ধতার কারণে ব্যাকটেরিয়া ও মশার জন্মের আশঙ্কা থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়েছে।

আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং পরবর্তী পরিকল্পনা

ঢাকা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মিরপুরের মতো নিম্নভূমি এলাকায় পানি জমার আশঙ্কা থাকায় সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শহরের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন। মিরপুরের জলাবদ্ধতার মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নিকাশি ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, পুরনো সড়ক নেটওয়ার্ক, এবং অপ্রতিসীম নির্মাণ কাজ।

জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা বলেছেন, “প্রতিবছর বর্ষার সময় মিরপুরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা তৈরি করে। ট্রাফিক বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপ আশা করি।”

অনেকে সামাজিক মাধ্যমে জলাবদ্ধতার ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছেন। এতে দেখা গেছে, গাড়ি ও রিকশা চলাচল প্রায় বন্ধ, আর পথচারীরা বৃষ্টির মধ্যে জল কাটতে বাধ্য হচ্ছেন।

সমাধান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ঢাকা শহরের পরিকল্পনাকারীরা মনে করছেন, দ্রুত উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা এবং সড়ক সম্প্রসারণ কার্যক্রমে জলাবদ্ধতা কমানো সম্ভব। বিশেষ করে নিম্নভূমি এলাকা ও ট্রাফিক জ্যামের পয়েন্টগুলিতে আধুনিক পাম্প স্থাপন এবং জল নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা করা জরুরি।

এছাড়া, নগরবাসীকে সচেতন করতে হবে বর্জ্য এবং প্লাস্টিক পানি নালার মধ্যে ফেলা থেকে বিরত থাকতে। কারণ নালায় আবর্জনা জমলে জল প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং জলাবদ্ধতার সমস্যা আরও প্রকট হয়।

সরকারি পদক্ষেপ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়মিতভাবে শহরের রাস্তা ও নালার পরিচর্যা করছে। তবে বর্ষাকাল শুরু হওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরীক্ষা ও পরিষ্কারের মাধ্যমে সমস্যা কিছুটা কমানো সম্ভব।

ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, বিশেষ টিম রাখা হয়েছে যা জরুরি সময়ে রাস্তা থেকে পানি পাম্পের মাধ্যমে সরানোর কাজ করবে। এছাড়া রাস্তায় ব্যস্ত সময়ে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।

ভবিষ্যতের সতর্কতা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহরের জলাবদ্ধতা শুধুমাত্র বর্ষার সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। বরং, নগর পরিকল্পনার অভাব, নদীর অবৈধ দখল, ও অপরিকল্পিত নির্মাণের ফলে এই সমস্যা ক্রমবর্ধমান। তাই ভবিষ্যতে নগর পরিকল্পনায় নতুন প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা যেতে পারে।

ঢাকার মিরপুরে বৃহস্পতিবারের হঠাৎ বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতা স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ট্রাফিক বিভাগের তৎপরতার ফলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে শহরের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়া এই সমস্যা বারবার ঘটতে থাকবে। নগরবাসী, পরিকল্পনাকারী, এবং প্রশাসন একযোগে কাজ করলে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি অনেকটাই হ্রাস পাবে।

MAH – 12753,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button