
অটলান্টিক মৌসুমের প্রথম বড় ঝড় হারিকেন ‘এরিন’ ইতিমধ্যেই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এর প্রভাবে কয়েকটি দ্বীপপুঞ্জ ও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ঝড়ের বর্তমান অবস্থা ও শক্তি
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের (NHC) তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে ঝড় ‘এরিন’ ক্যাটাগরি-৪ এ অবস্থান করছে। ঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। বর্তমানে এটি অ্যাঙ্গুইলার উত্তরপূর্বে প্রায় ১২০ মাইল (১৯৩ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছে।
ঝড়টি শুধু শক্তি বৃদ্ধি করছে না, এটি একটি সুস্পষ্ট পথ ধরে অগ্রসর হচ্ছে, যা নির্দিষ্ট অঞ্চলে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, উপকূলবর্তী এলাকাগুলোর মানুষ প্রস্তুতি নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।
ঝড়ের প্রভাবিত অঞ্চল
হারিকেন এরিনের কারণে মূলত নিম্নলিখিত এলাকায় প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে:
- উত্তর লিউয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ
- ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ
- পুয়ের্তো রিকো
- হিস্পানিওলা
- তুর্কস ও কাইকোস দ্বীপপুঞ্জ
এরই মধ্যে, আগামী সপ্তাহে ঝড়ের প্রভাব বাহামা, বারমুডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল পর্যন্ত বিস্তার করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারী বৃষ্টিপাত, শক্তিশালী বাতাস এবং সমুদ্র জোয়ারের কারণে এই অঞ্চলগুলিতে জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
ঝড়ের পূর্বপটভূমি
বিগত কয়েক বছরে, অটলান্টিক মৌসুমে একাধিক শক্তিশালী ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এই ধরনের ঝড়গুলো মূলত সমুদ্রের উষ্ণ জল থেকে শক্তি সংগ্রহ করে। এরিনও সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হারিকেনের পথ ও শক্তি নির্ধারণে জল তাপমাত্রা, বাতাসের গতিবেগ এবং অন্যান্য জলবায়ু উপাদানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরিনের ক্ষেত্রে এই সব শর্তই ঝড়ের গতিকে ত্বরান্বিত করছে।
প্রভাব ও প্রস্তুতি
উত্তর লিউয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ, ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ এবং পুয়ের্তো রিকোর বিভিন্ন অঞ্চলে রোববার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে। কিছু অঞ্চলে জরুরি পরিস্থিতির জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দূরে থাকা, মজবুত ভবনে অবস্থান করা এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ করা জরুরি।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
NHC-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত দশকে অটলান্টিক অঞ্চলে Category-4 বা তার বেশি শক্তিশালী ঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরিনও সেই ধারাবাহিকতার একটি অংশ।
পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় এই ধরনের ঝড়ের প্রভাব মানব জীবনে এবং অবকাঠামোতে আরও বড় ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্তুতি ও সতর্কতা ছাড়া এই ঝড়ের প্রভাব অনেক গুরুতর হতে পারে।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
সমুদ্রবিজ্ঞানী ড. সামিরা রহমান মন্তব্য করেছেন, “হারিকেন এরিন শক্তি বৃদ্ধি করছে এবং পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি যে কোনো মুহূর্তে আরও বিপজ্জনক আকার ধারণ করতে পারে। স্থানীয়দের সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরণের ঝড়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।
শেষ কথা
হারিকেন এরিন ইতিমধ্যেই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে এবং পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উত্তর লিউয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল পর্যন্ত এর প্রভাব হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে ঝড়ের গতিপথ এবং স্থানীয় প্রস্তুতির ওপর। তবে আগেভাগে সতর্কতা নিলে ক্ষতি কমানো সম্ভব।
এম আর এম – ০৮৯৩, Signalbd.com