
দেশের চারটি বিভাগে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসব বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় বজ্রসহ ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি বর্ষণ হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে সারাদেশেই তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা বৃদ্ধি
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি শাখা উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। এই মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থানে রয়েছে।
এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি এবং কিছু এলাকায় ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে অধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কোন কোন জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেশি?
রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও কুড়িগ্রাম, রাজশাহী বিভাগের নাটোর, বগুড়া ও পাবনা, খুলনার যশোর, খুলনা সদর ও সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম মহানগরী, কক্সবাজার ও বান্দরবান অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
এই অঞ্চলে দমকা হাওয়া ও বজ্রপাতসহ ভারি বৃষ্টির কারণে সাময়িক জলাবদ্ধতা বা নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে পূর্বাভাসে সতর্ক করা হয়েছে।
সারাদেশে তাপমাত্রা কমতে পারে
বৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অধিকাংশ স্থানে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে আসতে পারে বলে জানানো হয়েছে। ফলে কিছুটা স্বস্তিদায়ক আবহাওয়া অনুভব করতে পারেন সাধারণ মানুষ।
তবে কিছু স্থানে উচ্চ আর্দ্রতার কারণে ভ্যাপসা গরমের অনুভূতিও হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার পূর্বাভাস
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতেও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।
সপ্তাহের বাকি অংশজুড়ে দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে এবং কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
জলাবদ্ধতা ও কৃষি খাতে প্রভাব
শহরাঞ্চলে ভারি বর্ষণের ফলে স্বল্পমেয়াদি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর নিম্নাঞ্চলে। এতে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে সমস্যা এবং ছোটখাটো দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকতে পারে।
অন্যদিকে কৃষি খাতের জন্য এই বৃষ্টিপাত কখনো কখনো আশীর্বাদস্বরূপ হলেও অতিরিক্ত বৃষ্টি ফসলের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব এলাকায় ধান চাষ, সবজি ও তিল চাষ চলছে, সেখানে অতিরিক্ত পানির কারণে গাছ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
জুলাইয়ের শেষের দিকেও ভারি বৃষ্টিপাত
এর আগেও জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন বিভাগে টানা তিন দিন ধরে ভারি বৃষ্টি হয়েছিল। তখন রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা ও যানজট সৃষ্টি হয়। এই অভিজ্ঞতার আলোকে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, আগস্ট মাসে সাধারণত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি থাকে এবং এ সময়ে ঘনঘন মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। তাই জনগণকে আবহাওয়ার আপডেটের প্রতি সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন বিভাগের স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে যাতে ভারি বর্ষণজনিত দুর্ভোগ মোকাবিলা করা যায়।
শেষ কথা
চারটি বিভাগে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাসের কারণে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে যাতায়াত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে যেন প্রস্তুতি নেওয়া থাকে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি উপকারী হলেও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত যেন ক্ষতির কারণ না হয় — সেটিই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
এম আর এম – ০৭৪৪, Signalbd.com