আবহাওয়া

কক্সবাজার উপকূল প্লাবিত, সাগর উত্তাল নিম্নচাপের প্রভাবে

Advertisement

কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া উত্তাল সাগর এখনও থেমে নেই। উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত রয়েছে এবং পানির ঢেউ নামেনি। রোববার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে, সঙ্গে আছে ঝড়ো বাতাস। এসব আবহাওয়ার কারণে উপকূলীয় এলাকায় জনজীবন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে।

কক্সবাজার উপকূলের বর্তমান পরিস্থিতি

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল থেকে এখনও পানি নামেনি। সমুদ্রের ঢেউ প্রবল বেগে উপকূলের ওপর আছড়ে পড়ছে। বিশেষ করে কুতুবদিয়ায় ভেঙে যাওয়া আলী আকবর দেইল বেড়িবাঁধ এখনও মেরামত হয়নি। বেড়িবাঁধটি ভাঙার কারণে এলাকাটি প্লাবিত হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের প্রভাব

রোববার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, যা এখনও থামেনি। এর সঙ্গে রয়েছে ঝড়ো বাতাস, যা উপকূলীয় এলাকায় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বাতাসের তীব্রতায় গাছপালা ও বিদ্যুতের তার ঝুলছে, অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এসব আবহাওয়ার কারণে উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যান্য প্লাবিত এলাকা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

কক্সবাজারের পাশাপাশি মহেশখালীর ধলঘাটা ও মাতারবাড়ির নিম্নাঞ্চলও পানিবন্দি রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে চলা অবিরাম বৃষ্টির কারণে এই এলাকাগুলোর রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিঘ্নিত হয়েছে। মেরিন ড্রাইভ সড়ক, যা টেকনাফ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যোগাযোগের প্রধান সড়ক, সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কের ধ্বংসাবশেষ ও পানির জোয়ারে চলাচল বন্ধ রয়েছে।

পানিবন্দি ও জনজীবনে প্রভাব

পানিবন্দি হওয়া এসব এলাকায় বসবাসরত মানুষজন দুর্ভোগে পড়েছেন। তাবালর চর, বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশের রাস্তা পানিতে ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়দের জীবিকা ও সাধারণ জীবনযাত্রায় বড় ধরনের ব্যাঘাত দেখা দিয়েছে। জরুরি চিকিৎসা সেবা ও বাজার সামগ্রীর সঠিক সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। অনেক পরিবার নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বেড়িবাঁধ ভাঙার পর পরিস্থিতির অবনতি

কুতুবদিয়ায় ভাঙা আলী আকবর দেইল বেড়িবাঁধের মেরামত না হওয়ায় সমুদ্রের ঢেউ সেখানকার নিম্নাঞ্চলে প্রবল আঘাত হানছে। এ কারণে বন্যার পানি সরাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে অতিরিক্ত পানি প্রবাহে সেখানকার ফসলি জমি ও গৃহস্থালী সম্পদ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থা

এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পানি নিষ্কাশন ও বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য তদারকি চলছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার সূত্র জানায়, অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত করা হবে এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের স্থানান্তর ও জরুরি ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

সাগরের বর্তমান অবস্থান ও পূর্বাভাস

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে। তবে সামুদ্রিক বাতাস ও ঢেউ কয়েকদিন আরও উত্তাল থাকতে পারে। তাই উপকূলীয় এলাকার মানুষকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার সহ উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলগুলোতে নিম্নচাপের কারণে সৃষ্টি হওয়া প্লাবনের কারণে জনজীবন, যোগাযোগ ও অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। সমুদ্রের ঢেউ এখনো উত্তাল রয়েছে, বেড়িবাঁধ ভাঙার কারণে পানির জোয়ারে ক্ষতি হচ্ছে বেশি। সরকারের উদ্যোগে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে, কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি এখনও সংকটাপন্ন।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button