আবহাওয়া

চার বিভাগে ভারী বৃষ্টি, আবহাওয়ার সতর্ক বার্তা

Advertisement

বাংলাদেশের চারটি বিভাগে আগামী কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা দেখা দিতে পারে বলে জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বিশেষত ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগেও অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এই আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে কৃষক, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কারণ, ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা, জলাবদ্ধতা ও যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের বিস্তারিত পূর্বাভাস

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা মঙ্গলবার (২২ জুলাই) জানালেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশ কিছু এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর সঙ্গে থাকতে পারে বজ্রসহ বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া।

একই সময় রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

প্রতিদিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংক্ষেপে:

  • বুধবার (২৩ জুলাই):
    ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী বর্ষণসহ বৃষ্টি হবে। রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
  • বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই):
    ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেটের অধিকাংশ জায়গায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমে যেতে পারে।
  • শুক্রবার (২৫ জুলাই):
    খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেটের কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। সারাদেশে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
  • শনিবার (২৬ জুলাই):
    খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেটের অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত চলতে পারে। সারাদেশে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।

কেন হচ্ছে ভারী বৃষ্টি?

বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের শেষদিকে এ অঞ্চলে সমুদ্র থেকে প্রবল আর্দ্রতা প্রবাহিত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের গরম জলস্রোত বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা ভারী বৃষ্টিপাতের অন্যতম কারণ। এছাড়া উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ঝড়ো হাওয়া ও নিম্নচাপের সৃষ্টি বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি করছে।

এই ধরনের আবহাওয়া পরিবর্তন বিশেষ করে বর্ষাকালে কৃষি, পরিবহন ও জনজীবনে প্রভাব ফেলে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

প্রভাব ও প্রস্তুতি

ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। ফসলের ক্ষতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়া ও বন্যা দুর্গত এলাকায় মানুষের জীবনে ঝুঁকি বাড়তে পারে।

সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।

জনগণের প্রতি আবহাওয়া অধিদফতর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশন বন্ধ রাখা, নদী-নালা ও খালের মুখ পরিষ্কার রাখা জরুরি। এছাড়া, ঢালু ও পাহাড়ি এলাকায় আবাসিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কৃষকদের জন্য বিশেষ বার্তা

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, কৃষকদের উচিত ফসলের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া। ধান ও সবজি ক্ষেতে জলাবদ্ধতা রোধের ব্যবস্থা করতে হবে। পরবর্তী দুই-তিন দিন গাছের অতিরিক্ত পানি জমতে দিলে তা দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয় প্রণালী ব্যবহার করতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও স্থানীয় কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা গ্রহণ করাও জরুরি।

ভারী বৃষ্টির কারণে সড়ক ও রেল যোগাযোগে প্রভাব

ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ও রেল যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে। জলাবদ্ধতার ফলে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও অন্যান্য মহাসড়কে যানজট ও দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ পূর্ব সতর্কতা নিয়ে ট্রেন ও বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে।

পর্যটকদের জন্য সতর্কবার্তা

সিলেট, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির কারণে পর্যটকদের বিশেষ সতর্ক থাকার প্রয়োজন। পাহাড়ি এলাকায় বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলতে হবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে ঝুঁকি নিতে না হলে ভালো হবে।

আবহাওয়ার এই প্রবণতা থেকে কী শিখতে পারি?

বছরের এই সময় ভারী বৃষ্টি ও বজ্রপাত হওয়া স্বাভাবিক হলেও আমাদের প্রস্তুত থাকা জরুরি। জলাবদ্ধতা রোধে সুষ্ঠু নিকাশন ব্যবস্থা, নদী খনন ও দখলমুক্ত রাখা জরুরি।

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

সংক্ষেপে

  • আগামী ৪-৫ দিন ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
  • চার বিভাগ (রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট) সহ দেশের অন্যান্য বিভাগে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হবে।
  • দিনের তাপমাত্রা সামান্য ওঠানামা করবে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
  • বন্যা ও জলাবদ্ধতার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
  • সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত।
মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button