আবহাওয়া

ধেয়ে আসছে শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ‘ধারা’, ২৪ জুলাই থেকে দেশজুড়ে বৃষ্টির আশঙ্কা

Advertisement


বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে বছরের অন্যতম শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ‘ধারা’। আবহাওয়া বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এই বৃষ্টিবলয় ২৪ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন বিভাগে ধাপে ধাপে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় ও পাহাড়ি অঞ্চলে রয়েছে ভূমিধস ও বজ্রপাতের আশঙ্কা।

বৃষ্টিবলয় ‘ধারা’ সম্পর্কে পূর্বাভাস

বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, দেশের দিকে ধেয়ে আসছে একটি প্রায় পূর্ণাঙ্গ ও দীর্ঘস্থায়ী মৌসুমি বৃষ্টিবলয় ‘ধারা’। তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই বৃষ্টিবলয়টি আগামী ২৪ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে এবং দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই ধাপে ধাপে প্রভাব ফেলবে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, ‘ধারা’ একটি শক্তিশালী মৌসুমি বৃষ্টিবলয়, যার কারণে উপকূলীয় অঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা ও নিম্নাঞ্চলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে। এই সময় সাগর কিছুটা উত্তাল থাকবে এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলে দমকা হাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

কোন কোন অঞ্চলে কেমন প্রভাব পড়বে?

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃষ্টিবলয় ‘ধারা’ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন মাত্রায় প্রভাব ফেলবে।

সর্বাধিক প্রভাবিত অঞ্চল:

চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগ — এই তিনটি বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকিও বাড়ছে।

মাঝারি মাত্রায় প্রভাবিত অঞ্চল:

ঢাকা, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগ — এখানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলেও ভূমিধসের শঙ্কা থাকছে।

আংশিকভাবে প্রভাবিত অঞ্চল (২৮ জুলাইয়ের পর):

রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ — এখানে ২৮ জুলাইয়ের পর হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

পূর্বের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান পরিস্থিতি

এ বছর এখন পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে কাঙ্খিত পরিমাণে বৃষ্টি না হওয়ায় জনজীবনে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। কৃষিকাজেও এর প্রভাব পড়ছে। অনেক এলাকায় আর্দ্রতা ও পানির স্বল্পতায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন।

তবে এবারের বৃষ্টিবলয় ‘ধারা’ যদি পূর্বাভাস অনুযায়ী সক্রিয় হয়, তাহলে দেশের কৃষিখাতে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতার আশঙ্কাও রয়েছে, বিশেষ করে ঢাকার মতো বড় শহরগুলোতে।

পরিবহন ও জনজীবনে সম্ভাব্য প্রভাব

বৃষ্টিবলয় সক্রিয় থাকাকালীন সময়ে অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। সমুদ্র কিছুটা উত্তাল থাকায় জেলেদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পথঘাটে পানি জমে যানজট ও জনদুর্ভোগ বাড়তে পারে, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের মতো শহরগুলোতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সতর্কতা

আবহাওয়াবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৃষ্টিবলয়ের ব্যাপকতা এবং দীর্ঘস্থায়ীত্বের কারণে প্রশাসনের উচিত আগেভাগেই প্রস্তুতি নেওয়া।

বিশেষ করে সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

একজন আবহাওয়াবিদ বলেন,
“বৃষ্টিবলয় ‘ধারা’ একটি স্বাভাবিক মৌসুমি ঘটনা হলেও এর স্থায়ীত্ব ও প্রভাব অনেক বেশি হতে পারে। উপকূল ও পাহাড়ি অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে।”

সরকারের প্রস্তুতি ও করণীয়

আবহাওয়া অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনকে এখনই সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় নজর দেওয়া জরুরি।

পাহাড়ি অঞ্চলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা বিবেচনায় নিয়ে সতর্কবার্তা প্রচার, মাইকিং ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা উচিত। জেলেদের জন্য প্রয়োজনীয় বার্তা পৌঁছে দিতে হবে উপকূলীয় এলাকায়। পাশাপাশি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রস্তুত রাখা জরুরি।

আগামী দিনের সম্ভাব্য প্রভাব ও করণীয়

বৃষ্টিবলয় ‘ধারা’ যদি পূর্বাভাস অনুযায়ী সক্রিয় থাকে, তাহলে আগামী ৭ থেকে ১০ দিন দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভেজা থাকবে আকাশ। কৃষিতে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তবে শহরে জনদুর্ভোগ বাড়তে পারে।

সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণকে। সবাইকে আবহাওয়ার সর্বশেষ আপডেট নজরে রাখা এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সারসংক্ষেপ  

বৃষ্টিবলয় ‘ধারা’ বাংলাদেশের জন্য একদিকে যেমন কৃষিতে আশার বার্তা বয়ে আনতে পারে, অন্যদিকে ঝুঁকিও বাড়াতে পারে উপকূল ও পাহাড়ি অঞ্চলে। তাই আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতিই হতে পারে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর একমাত্র উপায়।

পরবর্তী ৭–১০ দিন আবহাওয়ার দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই বৃষ্টিবলয় কতটা সক্রিয় হয় এবং কতটা প্রভাব ফেলে দেশের জনজীবনে।

এম আর এম – ০৪৫৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button