
দেশজুড়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে মৌসুমি বায়ু। ফলে বাংলাদেশে আগামী পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই সময়কালে দেশের প্রায় সব বিভাগেই বিভিন্ন মাত্রার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণও হতে পারে।
বৃষ্টিপাতের বিস্তারিত পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ১২০ ঘণ্টা (পাঁচ দিন) পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
- বুধবার (১৭ জুলাই): রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
- বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই): ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে। অন্যান্য বিভাগেও বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে।
- শুক্রবার (১৯ জুলাই): ঢাকাসহ ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুরে কিছু কিছু জায়গায় দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি হতে পারে।
- শনিবার (২০ জুলাই): সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য বিভাগেও হালকা বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
- রবিবার (২১ জুলাই): বৃষ্টির প্রবণতা আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃষ্টিপাতের কারণ ও আবহাওয়ার সার্বিক চিত্র
আবহাওয়ার সিনপটিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে প্রভাব ফেলছে।
মৌসুমি বায়ুর অক্ষ বর্তমানে রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল পেরিয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি শাখা উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রসারিত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে সক্রিয় এবং অন্যান্য অংশে মোটামুটি সক্রিয়। এই অবস্থায় বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত বাড়বে।
তাপমাত্রা ও বৃষ্টির সঙ্গে প্রভাবিত হবে জনজীবন
টানা বৃষ্টির ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে যেমন—ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে পানি জমে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা আরও জানিয়েছেন, এই সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ষণের কারণে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও রোগবালাই বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পরিসংখ্যান
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, যেখানে ১৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে — ৩৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল টাঙ্গাইলে — ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সতর্কতা ও পরামর্শ
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টির এই প্রবণতা আগামী সপ্তাহ জুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে। নদীপথে চলাচলরত নৌযান এবং উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কাও থেকে যায়, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টিপাতের সময় বজ্রপাতের সম্ভাবনাও আছে। তাই খোলা মাঠে বা গাছের নিচে অবস্থান না করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
সারসংক্ষেপ
টানা পাঁচ দিন বর্ষণের পূর্বাভাস জনজীবনে এক ধরনের প্রভাব ফেলবে, এটি নিশ্চিত। শহরে যানজট ও জলাবদ্ধতা যেমন নাগরিকদের ভোগাবে, তেমনি কৃষিপ্রধান এলাকাগুলিতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু সুফলও মিলতে পারে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—বৃষ্টির এই ধারাবাহিকতা আরও দীর্ঘায়িত হলে এর প্রভাব কতটা গভীর হবে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নাগরিকদের এই সময় সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
এম আর এম – ০৩৬৯, Signalbd.com