জুলাইয়ে ৩টির মতো লঘুচাপ, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন বার্তা

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী, জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-৩টি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। তবে চলতি মাসে ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা নেই বলেই আশ্বস্ত করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
মাসব্যাপী আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যা জানা গেল
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ২ জুলাই প্রকাশিত এক মাসব্যাপী আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানিয়েছে, চলতি জুলাই মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ৩টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এই পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও ৫ থেকে ৬ দিন বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে অতিবৃষ্টি ও ভয়াবহ বন্যার সম্ভাবনা কম থাকায় দেশের মানুষ খানিকটা স্বস্তিতে রয়েছে।
নদ-নদীর পানিসমতল: প্রথমার্ধে বাড়বে, দ্বিতীয়ার্ধে স্থিতিশীল
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, জুলাই মাসের প্রথমার্ধে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানিসমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং রংপুর বিভাগের বিভিন্ন নদীর পানির স্তর স্বাভাবিক অপেক্ষা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে নদীগুলোর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে বড় ধরনের প্লাবনের আশঙ্কা খুব কম।
বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপ: কী প্রভাব ফেলবে?
জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে গঠিত লঘুচাপ গুলো যদি শক্তি সঞ্চয় করে নিম্নচাপে রূপ নেয়, তাহলে দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এসব লঘুচাপ বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার শঙ্কা নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রের উপরিভাগে বর্তমানে তাপমাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। ফলে লঘুচাপগুলো বড় ধরনের দুর্যোগে পরিণত না হলেও, বৃষ্টিপাত বাড়াতে পারে।
কোন এলাকায় বন্যার সম্ভাবনা বেশি?
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানাচ্ছে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দেশের ছয়টি জেলার নিচু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এসব জেলা হলো—সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, ফেনী এবং রংপুরের কিছু অংশ।
বিশেষ করে সুরমা, কুশিয়ারা, মুহুরী, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি আগামী কয়েকদিনে বিপৎসীমা ছুঁতে পারে বা অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই বন্যাগুলো হবে ক্ষণস্থায়ী ও ছোট পরিসরের।
তাপপ্রবাহ: কোথায়, কতদিন?
স্বাভাবিক বর্ষার মধ্যেও দেশের পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জেলায় ১-২টি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এতে তাপমাত্রা ৩৬° থেকে ৩৮° সেলসিয়াসে উঠতে পারে। সাধারণত রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, যশোরসহ পশ্চিমাঞ্চলে এই ধরণের আবহাওয়া বেশি লক্ষ করা যায়।
তবে তাপপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় কৃষি বা স্বাস্থ্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
পরিসংখ্যান ও অতীত অভিজ্ঞতা
গত পাঁচ বছরের জুলাই মাসের আবহাওয়ার বিশ্লেষণ বলছে, প্রতিবছর গড়ে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে একটি বা দুটি নিম্নচাপে রূপ নেয় এবং সীমিত বৃষ্টিপাত হয়। তবে ২০২২ সালে জুলাই মাসে মাত্র ১টি লঘুচাপ সৃষ্টি হয় এবং তা থেকে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
অন্যদিকে ২০২৩ সালে একই সময়ে ৩টি লঘুচাপ তৈরি হয়েছিল, যার একটির ফলে সিলেট অঞ্চলে হালকা বন্যা দেখা দেয়। ফলে চলতি বছরের পূর্বাভাস সেই তুলনায় অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ও সহনীয় বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. ফারহানা রহমান বলেন,
“জুলাই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত দেশের কৃষির জন্য সহায়ক হবে। তবে পাহাড়ি ঢলের কারণে কিছু নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা ক্ষণস্থায়ী হবে।”
তিনি আরও জানান, “বঙ্গোপসাগরের উপর লক্ষ রাখা হচ্ছে। যদি কোন লঘুচাপ ঘনীভূত হয়, তখন তাৎক্ষণিক সতর্কতা জারি করা হবে।”
সারসংক্ষেপঃ
চলতি জুলাই মাসে দেশের আবহাওয়া মোটের উপর সহনীয় থাকবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। কিছু লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বড় ধরনের দুর্যোগের সম্ভাবনা কম।
কিছু এলাকায় নদীর পানি বৃদ্ধি ও ক্ষণস্থায়ী বন্যা সৃষ্টি হলেও, সার্বিকভাবে দেশে তেমন কোনো ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা নেই। তবে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এম আর এম – ০১৫৩, Signalbd.com