
ফেনীর ভয়াবহ বন্যায় তোলা ত্রাণ তহবিল নিয়ে অনিশ্চয়তা ও প্রশ্নের মাঝে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ফেনীতে বন্যার জন্য উত্তোলিত অর্থ একটি বিশ্বস্ত ও স্বচ্ছ ফার্মের মাধ্যমে অডিট করা হয়েছে এবং সেই রিপোর্টসহ টাকা সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের ফান্ডে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন এই টাকা কোথায় ও কিভাবে ব্যয় হয়েছে, তার সঠিক হিসাব জানতে হবে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমাদের কাছে নয়।”
ধাপে ধাপে সর্তকতা এবং দায়িত্বপূর্ণ তহবিল ব্যবস্থাপনা
গত ২১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে খাগড়াছড়ি থেকে পদযাত্রা শেষে ঢাকায় ফেরার পথে ফেনীতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান। তিনি বলেন, “২০২৪ সালে আমরা যেসব ত্রাণ সহায়তার জন্য অর্থ উত্তোলন করেছিলাম, সেগুলো আমরা অডিট করিয়েছি এবং পরে সরাসরি ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের তহবিলে জমা দিয়েছি। আমাদের নিজের কোনও পর্যায়ে সেই তহবিল ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বা প্রয়োজনীয় জনবল ছিল না। তাই আমাদের পক্ষে সরাসরি তহবিল ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয়নি।”
সারজিস আলম আরও বলেন, “টাকার অপব্যবহার যাতে না হয়, এজন্যই আমরা সরকারী ব্যবস্থাপনায় আস্থা রেখেছি। আমরা মনে করি, সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয় একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে এই তহবিলটি ছিল ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পরিচালিত ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তহবিল। আমরা যদি তাদের ওপর আস্থা না রাখি, তাহলে কার ওপর রাখব?”
ফেনীর মানুষের জন্য স্বচ্ছতা ও বিস্তারিত হিসাব প্রয়োজন
তিনি জানান, “আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি ফেনীর স্থানীয় নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছে, যাতে তারা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে বন্যা তহবিলের বিস্তারিত হিসাব সংগ্রহ করেন। কোথায়, কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে এবং সেই টাকা কিভাবে কাজে লাগানো হয়েছে — সব তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং যদি প্রয়োজন হয়, বাড়তি খরচের হিসাবও নেওয়া হবে। সবকিছুই ফেনীর সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ করা হবে, যাতে তারা জানতে পারেন টাকা ঠিকমত ব্যবহার করা হয়েছে কিনা।”
বন্যা তহবিল ব্যবস্থাপনায় সরকারের ভূমিকা ও দায়িত্ব
বাংলাদেশে বন্যা দুর্যোগ এখন একটি দুঃখজনক বাস্তবতা, যা প্রতি বছর বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টি করে। এসব দুর্যোগে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে দ্রুত এবং যথাযথ ত্রাণ বিতরণ অত্যন্ত জরুরি। ত্রাণ তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান দায়িত্ব। পাশাপাশি ত্রাণ তহবিল ব্যবস্থাপনার প্রতি জনগণের আস্থা রাখা অপরিহার্য। এজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত অডিট, হিসাব প্রকাশ ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা প্রমাণ করা উচিত।
ফেনী বন্যা: ক্ষতি ও পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ
ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতি প্রতি বছরই জটিলতার সৃষ্টি করে। নদীর জোয়ার বেড়ে যাওয়া, অতিবৃষ্টির ফলে ফেনীসহ আশেপাশের এলাকাগুলো পানিতে ডুবে যায়। এর ফলে হাজারো পরিবার বসতভিটা হারায়, ফসল নষ্ট হয়, জীবিকা বিপন্ন হয়। বন্যার পর স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জরুরি হয়ে ওঠে। এই ত্রাণ কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন সম্ভব হয়।
এনসিপির কার্যক্রম ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ফেনীর বন্যা ত্রাণ কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। তারা বন্যার সময় জনগণের পাশে থেকে ত্রাণ ও সহায়তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। সারজিস আলম ও তার দলের সদস্যরা স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা বুঝে ত্রাণ কার্যক্রমের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তারা কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে বন্যার তহবিল ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রত্যাশা
ফেনীর সাধারণ মানুষও ত্রাণ তহবিলের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনা চান। তারা প্রত্যাশা করেন, বন্যার জন্য তোলা তহবিল সঠিকভাবে খরচ হবে এবং অডিট রিপোর্টের মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। এই স্বচ্ছতার মাধ্যমে মানুষের মনে বন্যা তহবিল নিয়ে সন্দেহ কাটিয়ে ওঠা যাবে এবং সরকারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
সারসংক্ষেপ:
ফেনীর বন্যার জন্য তোলা ত্রাণ তহবিল নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠলেও এনসিপির নেতা সারজিস আলম স্পষ্ট করে দিয়েছেন, টাকা অডিটের মাধ্যমে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন বিস্তারিত হিসাব জানতে হবে সরকারিভাবে নিযুক্ত উপদেষ্টার কাছে। ফেনীর স্থানীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারি হিসাব সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষের কাছে সব তথ্য উপস্থাপন করার জন্য। এটি তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।