বাংলাদেশে স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন যুগের সূচনা

বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি অর্জন করলো মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) স্টারলিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেডকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ লাইসেন্স হস্তান্তর করেছে, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
এনজিওএস ও রেডিও কমিউনিকেশন লাইসেন্স হস্তান্তর
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট (NGSO) অপারেটর লাইসেন্স এবং রেডিও কমিউনিকেশন অ্যাপারেটার্স লাইসেন্স স্টারলিংকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। লাইসেন্স হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দেশের অনুমোদিত তরঙ্গ ব্যবহার করে সেবা দিতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি ও ব্যবহার করতে পারবে।
প্রথম লাইসেন্সটি লাইসেন্সিং বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল সৈয়দ মো. তৌফিকুল ইসলাম, স্টারলিংক গ্লোবাল লাইসেন্সিং অ্যান্ড মার্কেট অ্যাভিয়েশনের পরিচালক রেবেকা স্লিক হান্টারের কাছে হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র লিগ্যাল ও লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু ও উপপরিচালক মো. নাহিদুল হাসান।
অপরদিকে স্পেকট্রাম বিভাগের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় লাইসেন্সটি হস্তান্তর করেন পরিচালক ড. মো. সোহেল রানা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জাকারিয়া ভূঁইয়া।
সরকারের অনুমোদন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুমোদনের পর এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়। বিটিআরসি জানিয়েছে, এই লাইসেন্সগুলো আগামী ১০ বছরের জন্য বৈধ থাকবে।
এর আগে ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের সময় স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু হয়। মূলত ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো স্টারলিংকের প্রযুক্তি পরীক্ষা চালানো হয়েছিল।
বাংলাদেশে স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রার পটভূমি
২০২৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূস ও স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্পেসএক্স-এর প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের মধ্যে এক ভিডিও কলে বাংলাদেশের ইন্টারনেট কাঠামোতে স্টারলিংকের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার ভিত্তিতে ২৫ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা স্টারলিংককে ৯০ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক সেবা চালুর নির্দেশ দেন।
প্রাথমিকভাবে স্টারলিংক তাদের বিদেশি গেটওয়ের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার করলেও, বাণিজ্যিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিজস্ব IIG (International Internet Gateway) ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় স্টারলিংকের অগ্রগতি
দক্ষিণ এশিয়ায় স্টারলিংক বর্তমানে শুধু শ্রীলঙ্কায় বাণিজ্যিক ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। ভারতেও শিগগিরই এ সেবা চালুর প্রস্তুতি চলছে। ফলে বাংলাদেশ হবে অঞ্চলটির দ্বিতীয় দেশ, যেখানে স্টারলিংক স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা শুরু করতে যাচ্ছে।
বৈশ্বিক পরিসরে স্টারলিংকের উপস্থিতি
স্টারলিংক বর্তমানে বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে সেবা দিচ্ছে এবং বিশ্বজুড়ে তাদের গ্রাহকসংখ্যা ৪৬ লাখ ছাড়িয়েছে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে সংস্থাটির মোট ৭,১৩৫টি স্যাটেলাইট রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা সরবরাহ করা হয়।
বাংলাদেশে স্টারলিংকের আগমন শুধু ইন্টারনেট প্রযুক্তির এক নতুন অধ্যায় নয়, বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে উন্নয়ন ও সংযোগে সমতা আনার একটি বড় সম্ভাবনা। লাইসেন্স হস্তান্তরের মাধ্যমে এ যাত্রার আনুষ্ঠানিক যবনিকা উন্মোচিত হলো, যার প্রভাব পরবর্তী বছরগুলোতে দেশের টেলিযোগাযোগ খাত এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।