সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ২৪৮ টাকা কমেছে

দেশের স্বর্ণ বাজারে আবারও দাম কমার ঘোষণা এলো। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাসের কারণে স্বর্ণের দামে এই সামঞ্জস্য আনা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার (৯ এপ্রিল) থেকে এ নতুন মূল্যহার কার্যকর হবে।
সর্বোচ্চ মানের ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরি দাম বর্তমানে দাঁড়াবে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৪ টাকা, যা পূর্ববর্তী সর্বোচ্চ মূল্য ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭২ টাকার তুলনায় ১,২৪৮ টাকা কম। এ সিদ্ধান্ত সাধারণ ভোক্তা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
মূল্য হ্রাসের পেছনের কারণ
বাজুসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা স্বর্ণের দরপতন ও স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার মূল্য হ্রাস পাওয়ার কারণে এই দাম কমানো হয়েছে। এমন একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যাতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও গ্রাহক উভয় পক্ষই বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে উপকৃত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে মার্কিন ডলারের দর বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্বর্ণের দাম সাময়িকভাবে কিছুটা স্থিতিশীল হলেও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব, বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণমুখী না হওয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর অবস্থানের কারণে কাঁচা স্বর্ণের দাম কিছুটা কমেছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে সোনার দামে।
বর্তমান দাম তালিকা
বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল বুধবার (৯ এপ্রিল) থেকে বাংলাদেশে স্বর্ণের নতুন মূল্য হবে নিচের মতো:
স্বর্ণের ক্যারেট | প্রতি ভরির নতুন দাম (টাকা) | পূর্ববর্তী দাম (টাকা) | কমেছে (টাকা) |
---|---|---|---|
২২ ক্যারেট | ১,৫৬,৬২৪ | ১,৫৭,৮৭২ | ১,২৪৮ |
২১ ক্যারেট | ১,৪৯,৪৯৮ | ১,৫০,৬৯৯ | ১,২০১ |
১৮ ক্যারেট | ১,২৮,১৪১ | ১,২৯,১৬৭ | ১,০২৬ |
সনাতন পদ্ধতি | ১,০৫,৬৬৪ | ১,০৬,৫৩৯ | ৮৭৫ |
উল্লেখযোগ্য যে, এই দামগুলোর মধ্যে হলমার্ক করা সোনার মান ও বিশুদ্ধতার ভিত্তিতে পার্থক্য রয়েছে।
আগের মূল্যবৃদ্ধি ও নতুন পতনের তুলনা
মার্চের ২৯ তারিখে বাজুস সর্বশেষ সোনার দাম বৃদ্ধি করেছিল, যেখানে ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরিতে ১,৭৭৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তখন সর্বোচ্চ মূল্য গিয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭২ টাকায়, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্য।
এই মূল্য হ্রাস সেই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে স্বর্ণ বাজারে একটি শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
নতুন দাম হ্রাসের খবরে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। অনেকেই যারা বিয়ের মৌসুমে সোনা কিনতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাদের জন্য এটি একটি স্বস্তির খবর। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, “সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে অনেক ক্রেতা সোনার গয়না কেনা থেকে পিছিয়ে ছিলেন। দাম কমলে বাজারে আবারও আগ্রহ বাড়বে।”
তবে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগও রয়েছে। তারা বলছেন, ক্রমাগত দাম ওঠানামার কারণে ক্রেতারা সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় থাকেন, ফলে বিক্রয়েও প্রভাব পড়ে।
আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামের পরিবর্তন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান, আমদানি শুল্ক, কর নীতি এবং ভোক্তার চাহিদার উপর ভিত্তি করেই দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২,২৭০ থেকে ২,৩০০ মার্কিন ডলারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। যা কিছুদিন আগের ২,৪০০ ডলার স্পর্শ করা দামের তুলনায় কিছুটা নিম্নমুখী। এই পতনই বাংলাদেশের বাজারে দাম হ্রাসের অন্যতম কারণ।
ভবিষ্যৎ বাজার পরিস্থিতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে স্বর্ণের দাম আরও কমতে পারে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে চাপ অব্যাহত থাকে। তবে একইসঙ্গে জিও-পলিটিকাল ইস্যু, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগের রূপ পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনাও সৃষ্টি করতে পারে। তাই যারা সোনা কিনতে চান, তাদের এই সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
উপসংহার
সোনার দাম হ্রাস বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য একটি ইতিবাচক দিক হতে পারে। বিশেষ করে বিয়ের মৌসুম ও বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে এই দাম হ্রাস ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবে। তবে ব্যবসায়ীদের জন্য এটি মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি এবং সরকারী নীতিমালার ওপর নির্ভর করেই আগামী দিনে সোনার বাজার কোন দিকে যাবে, তা নির্ধারিত হবে।